বৃহস্পতিবার ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে ট্যানারি শ্রমিকরা

  |   মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   22 বার পঠিত

মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে ট্যানারি শ্রমিকরা

অর্থবিজ প্রতিবেদক :
ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য সরকার নতুন ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা দেবার পর ৬ মাস হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন করেননি ট্যানারি শিল্প মালিকরা। মাসের পর মাস মজুরি বাস্তবায়নে মালিকরা টালবাহান করায় কঠোর আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা। আজ মঙ্গলবার থেকে সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্প নগরীতে অবস্থিত প্রতিটি কারখানায় দুই ঘন্টা করে কর্মবিরতী পালন করবেন ট্যানারি শ্রমিকরা।
আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এভাবে কর্মবিরতি চলবে, এরপরও নতুন মজুরি বাস্তাবয়ন না করা হলে আগামী শনিবার থেকে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার চামড়া শিল্পনগরীস্থ ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ট্যানারি ওয়াকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেকসহ ট্যানারি ওয়ার্কার্স এসোসিয়েশনের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং সহস্রাধিক ট্যানারি শ্রমিক।
শ্রমিক সমাবেশে ট্যানারি ওয়াকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্যানারি মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে নানা রকম অনিয়ম করে আসছেন। তাদের অনিয়মনের কারণেই ইউরোপের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে চামড়া নিতে চাচ্ছে না। আর এই অযুহাত দেখিয়ে ট্যানারি মালিকরা নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। এর আগেও ট্যানারি শিল্পে চারটি ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছিল কিন্তু সেগুলোও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করেনি মালিকরা। এবারও একই পথে হাঁটছে। এবার নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করার পর আশা করেছিলাম মালিকরা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করবে, কিন্তু ৬ মাস হয়ে গেলেও বাস্তবায়ন করেনি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ৫ গ্রেডের নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন না করলে সকল ট্যানারি শ্রমিককে নিয়ে আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।
ট্যানারি ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, টানা ১৫ মাস মোট ১০টি সভা এবং সকল পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নিম্নতম মজুরী বোর্ড গেজেটের মাধ্যমে খসড়া সুপারিশ প্রকাশ করে। গেজেটে উল্লেখিত আহ্বান মাফিক কোন পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপিত না হওয়ায় নিয়মানুযায়ী নিম্নমত মজুরী বোর্ড তাদের সুপারিশ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করে। যারই ধারাবাহিকতায় গত ২১ নভেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ট্যানারী শিল্পে বিভিন্ন গ্রেডে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য চূড়ান্ত নিম্নতম মজুরীর হার প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর নির্দেশনা মোতাবেক গত ২১ নভেম্বর থেকেই এই নিম্নতম মজুরী পাওয়া বাংলাদেশের ট্যানারী শিল্পে কর্মরত সকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য আইনগত অধিকার, কিন্তু ট্যানারি মালিকরা শ্রমিকদের অধিকার হরণ করে নতুন মজুরি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
জনাযায়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে গত বছরের ২৩ জুলাই ট্যানারী শিল্প সেক্টরের নিম্নতম মজুরী সুপারিশের জন্য নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠন করে। কিন্তু তৎকালীন সরকারের সময় গঠিত উক্ত মজুরী বোর্ডে ট্যানারী শিল্পের মানিকপক্ষের প্রতিনিথি থাকলেও ট্যানারী শিল্পের শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধিকে না রেখে আইন বহির্ভূতভাবে অন্য সেক্টর থেকে তাদের দলীয় একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করায় শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ইউনিয়ন ও অংশীজনের আপত্তি ও প্রতিবাদের কারনে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এর সাধারন সম্পাদক আব্দুল মালেক-কে ট্যানারী শিল্পের শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নিম্নতম মজুরী বোর্ডটি পুনর্গঠিত হয়।
এর পর টানা ১৫ মাস ১০টি সভা এবং সকল পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নিম্নতম মজুরী বোর্ড গেজেটের মাধ্যমে খসড়া সুপারিশ প্রকাশ করে। সবশেষ গত ২১ নভেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ট্যানারী শিল্পে বিভিন্ন গ্রেডে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য চূড়ান্ত নিম্নতম মজুরীর হার প্রকাশ করে। ইতোমধ্যে গত ২ জানুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর মালিক সমিতি বিটিএ ও বিএফএলএলএফইএ বরাবর নির্দেশনামূলক চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ট্যানারী শিল্প সেক্টরে কর্মরত সকল শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরী বাস্তবায়ন করা।
নিম্নতম মজুরী ঘোষনা হওয়ার পর থেকেই মালিকপক্ষের অনুরোধে ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ও কারখানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ কয়েকবার বৈঠক করেছে। বৈঠকে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নিম্নতম মজুরী বাস্তবায়নের জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়। অথচ মালিকপক্ষ তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে সরকার ঘোষিত ৫টি গ্রেড এ নির্দেশিত নিম্নতম মজুরী বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছে।
মালিকরা গড়িমসি করায় ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতারা জানান, ৫টি গ্রেডে ট্যানারী শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরী বিষয়ে ইউনিয়নের পক্ষে কোন ধরনের ছাড় ওদ্রয়া হবে না। কেন না, নিম্নতম মজুরী বোর্ডে যে ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করা হয়েচে, তা ট্যানারি মালিকপক্ষই প্রস্তাব করেছিলো। অথচ ইউনিয়ন শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেছিল ২৫ হাজার টাকা। মালিকরা তা নাকচ করে তাদের দেওয়া প্রস্তাবই শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত করা হয়। অথচ তাদের দেওয়া প্রস্তাবই মালিকরা এখন মানছেন না এবং সেটি বাস্তবায়ন করছেন না।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:১১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

Arthobiz |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক : অহিদুজ্জামান মিঞা
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: খান ম্যানশন, ৮-ই, ২৮/এ-৫, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: arthobiz61@gmail.com
যোগাযোগ: 01670045191