
| শুক্রবার, ০১ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট | 79 বার পঠিত
অর্থবিজ ডেস্ক :
আজ জাতীয় বীমা দিবস। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপিত হবে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ সকাল দশ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বীমা দিবসের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি। বীমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিসহ এ খাতের সশ্লিষ্ট বিবিষ্ট জনেরা আমন্ত্রিত হয়েছেন এ অনুষ্ঠানে। রাজধানীর বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দিবসটি উদযাপনের জন্য নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এ উপলক্ষে আইডিআরএ’র কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার চেয়ারম্যান জাতীয় বীমা দিবস উদযাপন এবং বীমা সেক্টরের সাবির্ক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ বছরে বীমা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ’করবো বীমা গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বালাদেশ,।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বীমা কোম্পানির চাকরিতে যোগদানের সেই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। জাতীয় বীমা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে বীমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা, যাতে তারা নিজ উদ্যোগেই বীমা পলিসি গ্রহণে আগ্রহী হয়। ১৯৫৯ সালের ৭ আগস্ট পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান ‘ইলেকশন বডিস ডিসকোয়ালিফিকেশন অর্ডার, যা সংক্ষেপে ‘এবডো’ নামে পরিচিত আইন জারি করেন। এই আইনের ফলে স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি গ্রহণের পরিকল্পনা করেন। বঙ্গবন্ধু জীবিকা নির্বাহের জন্য বীমা কোম্পানিতে যোগদান করেননি। তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার সুবিধার্থে বীমা কোম্পানির চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। কারণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি গ্রহণ করলে স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরিকালীন সময় দেশের বিভিন্ন স্থানের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন। এতে তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে কোনো বিঘœ ঘটেনি। আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরিকালীন অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৬ দফা, যা বাঙালির মুক্তিসনদ হিসেবে পরিচিত তা প্রণয়ন করেন। আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে বঙ্গবন্ধু দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের কর্মীদের বীমা কোম্পানিতে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হন। বীমা কোম্পানিতে যোগদানের ফলে বঙ্গবন্ধু এই খাতের দুর্বলতা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হওয়ার সুযোগ পান। পরবর্তী সময় তিনি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন বীমাখাত নিয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যদি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে পারতেন, তাহলে বীমাখাত অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু ঘাতকরা তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। ১ মার্চ বাংলাদেশের বীমাখাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। বীমাখাত সংশ্লিষ্টরা এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। ১ মার্চ বাংলাদেশিদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু বীমাশিল্পের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেহতু তিনি নিজেই একসময় বীমা কোম্পানিতে যুক্ত হয়েছিলেন তাই তিনি এই খাতের সমস্যা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। পাকিস্তান আমলেও আমাদের এই অঞ্চলে বীমাশিল্পের বেশ প্রভাব লক্ষ করা যেতো। যেমন বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন দেশে স্থানীয় এবং বিদেশি মিলিয়ে মোট ৪৯টি বীমা কোম্পানি ব্যবসারত ছিল। বিদেশি বীমা কোম্পানি বাদে স্থানীয় যেসব বীমা কোম্পানি ছিল তার অধিকাংশেরই মালিক ছিলেন অবাঙালি। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অথবা অব্যবহিত পরে তারা এ দেশ ত্যাগ করে পাকিস্তানে চলে যান। ফলে এসব বীমা কোম্পানি পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম চেতনা বা উপলক্ষ ছিল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রচলন করা। সেই সূত্রে যখন সমস্ত উৎপাদন যন্ত্রকে রাষ্ট্রমালিকানায় নিয়ে আসা হয়। সেই সূত্রে দেশে ব্যবসারত সব বীমা কোম্পানিকে জাতীয়করণ করা হয়। ৪৯টি বীমা কোম্পানিকে একত্রিত করে সুরমা, রূপসা, তিস্তা ও কর্ণফুলী নামে চারটি বীমা কোম্পানি গঠন করা হয়। এসব বীমা কোম্পানিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৭৩ সালে ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন আইন, ১৯৭৩ প্রণয়ন করে চারটি কোম্পানিকে ভেঙে রাষ্ট্রমালিকানায় জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশন গঠন করা হয়। সেই সময় বীমা কোম্পানিগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর অর্থনীতির অন্য খাতের মতো বীমা খাতও নানা জটিলতার আবর্তে পতিত হয়। বীমা খাত বিরাষ্ট্রীয়করনের মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত কওে দেয়া হয়। তবে এর সুফল দেশবাসী তেমন পায়নি। সে সময়ে বীমাখাত নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাভাবনা করা হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন হবার পর বীমা সেক্টর নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। সম্ভাবনাময় বীমাখাতকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৩৮ সালের বীমা আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু বিগত সরকারের সময়ে উদ্যোগ নেয়া হলেও দীর্ঘ সময়ে আইনটি প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে সংসদে আইনটি পাস হয় এবং ২০১০ সালের ১৮ মার্চ নতুন বীমা আইন- ২০১০ শিরোনামে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই আইনের বলে ২০১১ সালে ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) গঠন করা হয়। একজন চেয়ারম্যান, দুই জন সদস্যা এবং ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে আইডিআরএ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। আইডিআরএ গঠিত হবার পর বীমাখাতে উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আইডিআরএর বর্তমান চেয়ারম্যান অত্যন্ত বিচক্ষণভাবে এই খাত পরিচালনা করছে। তার নানানির্দেশনার ফলে বীমাখাত আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে গতিশীলতা পেয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন দুটিসহ দেশে ব্যবসারত ব্যক্তিমালিকানাধীন বীমা কোম্পানির সংখ্যা হচ্ছে ৮২টি। এর মধ্যে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি হচ্ছে-৩৬টি এবং নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ৪৬টি। এছাড়া ১৩৭টি বীমা জরিপকালীন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে এই খাতে অবদান রেখে চলেছে।
Posted ৮:২২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ মার্চ ২০২৪
Arthobiz | zaman zaman