
| বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট | 665 বার পঠিত
অর্থবিজ প্রতিবেদক :
নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির (আইআইডিএফসি) বিতর্কিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম সারওয়ারের নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন চেয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ড ফের আবেদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। একই সাথে গোলাম সারওয়ারের মেয়াদকালে কোম্পানির আইটি ও এইচআর বিভাগে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের আবেদন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
কোম্পানির খেলাপি ঋণ ৬১১ কোটি টাকা। ঋণ বিতরন ও পুনঃতফসিলীকরনে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এমতাব্যস্থায় তার পুনর্নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একবার নামঞ্জুর হওয়ার পরও কোম্পানির পরিচালনা পষর্দ পুনরায় অনুমোদন চেয়ে দ্বিতীয় দফায় আবেদন করেছে।
আগামী ৩১ মার্চ কোম্পানির এমডি পদে গোলাম সারওয়ারের বর্তমান নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল তিনি এই কোম্পানির এমডি পদে যোগ দেন। মেয়াদ শেষ হবার এক মাস আগেই আইআইডিএফসি’র পরিচালনা পষর্দ গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় তাকে দ্বিতীয় দফায় কোম্পানির এমডি পদে পুনরায় নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কাজজপত্র যাচাই বাছাই করে নিয়োগ অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাকে অনুমোদন না দেয়ার কারন উল্লেখ করে আইআইডিএফসি’র পরিচালনা পষর্দের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়। চিঠিতে গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়ার সময়ে বিতরণকৃত ঋণ আদায় পরিস্থিতি এবং এ ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা ও সুদ মওকুফ করা হলে তাতে কোন আমানতকারীর স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে কি না তাও জানাতে চাওয়া হয়। সে সময়ে আইআইডিএফসি’র পরিচালনা পষর্দের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে অর্থবিজকে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গোলাম সারওয়ারের নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করে নাই। এ বিষয়টি চিঠি দিয়ে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে। এখন উপযুক্ত কাউকে নিয়োগ দিয়ে তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ফের আবেদন করা হবে কিনা, এ সম্পর্কিত এক পশ্নের জবাবে তিনি অর্থবিজ বলেন, এটি আমার একার সিদ্ধান্তের বিষয় না, বোর্ড সভা ডেকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পবর্তীতে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় গোলাম সারওয়ারের নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন চেয়ে পুনরায় আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে পুনরায় আবেদন করাও হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দফায় করা আবেদনের ব্যাপারে এ প্রতিবেদন লেখা পযর্ন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন সিদ্ধন্ত নেই নি।
এদিকে গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকে তার বিরুদ্ধে দেয়া আর একটি অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আইআইডিএফসি লিঃ একটি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি শুরুলগ্ন থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সুনাম ও স্বচ্ছলতার সাথে ব্যবসা করে আসছিলো। ২০১৮ সালে গোলাম সারোয়ার ভূইয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর থেকে তার নেতৃত্বে অব্যবস্থাপনা, আত্মীয়করণ, ঋণ প্রদান ও পরিশোধে উপরিসুবিধা গ্রহণের চরম অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। তার দায়িত্বকালীন সময়ে কোম্পানীতে নানা অজুহাতে দক্ষ ও যোগ্য কর্মীদের ছাটাই করে নিজের আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে একছত্র আধিপাত্য কায়েম করেন, ফলে দক্ষ ও যোগ্য লোকবলের অভাবে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ বিতরণ ও ঋণ পরিশোধ কার্যμম চলে ডিমেতালে। এছাড়া ঋণ বিতরনে অনিয়মের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে এইচ আর, আইটি, আইসিসিতে নিজের আধিপত্য কায়েম করে ইচ্ছেমতো নিয়োগ প্রμিয়ায় আত্মীয়করণ ও আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে অদক্ষ ও অযোগ্য লোকবল নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোটি কোটি টাকা অপচয়, তহবিল তছরূপ ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যায়। এছাড়া, গোলাম সারোয়ার ভূইয়া নিয়োগ পাওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন কোর ব্যাংকিং সফট্ওয়ারে টেন্ডার প্রμিয়ায় নিজেদের লোককে কাজ পাইয়ে দেওয়া যেমন- ডিজেস্টার রিকভারী সাইড, যা নারায়ণগঞ্জে তৈরী করার সময় সিলেক্টেড হাইয়েস্ট বিডারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।যা আইনগত ক্সবধ হয়নি এবং আইটি সংμান্ত নতুন পণ্য μয় ও পুরাতন পণ্য বিμয় নিয়ে।
শুরুতে আইআইডিএফসি লিমিটেডে অ্যাপসিস লিমিেিটড কর্তৃক তৈরীকৃত ব্যাংককুলেটর নামক ওয়েব ভিত্তিক কোর ব্যাংকিং সফ্টওয়্যার ব্যাবহার হতো। যেটি ডাটাবেজ ছিল ঝছখ ভিত্তিক। পরবর্তীতে উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন সফ্ওয়্যার বাস্তবায়ন করার জন্য কোম্পানীর বোর্ড কর্তৃক নির্দেশিত সনামধন্য ২টি সরকারি ব্যাংক ১টি ইন্সুরেন্স কোম্পানীর আইটির প্রধান এবং একজন সরকারী আইটি বিষেশজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ও সুপারিশকৃত বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে ওরাকল ডাটাবেজে ক্সতরি লিড্স কর্পোরেশন লিঃ এর ব্যাংক আল্টিমাস নামক কোর ব্যাংকিং সফ্টওয়্যার এবং ইরা ইনফোটেক লিঃ এর অরবিট নামক পেরোল এন্ড এইচআর পোলিস সফ্টওয়ার দুটির জন্য দুটি কোম্পানী (লিডস্ এবং ইরাকে) কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এই জন্য অগ্রিম হিসেবে লিড্স কর্পোরেশনকে ৫২,৫০,০০০/- এবং ইরা ইনফোটেক লিঃ কে ১০,০০,০০০/- টাকা চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এই সফ্টওয়্যার দুইটি অনেক ব্যাংক ও ননব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অত্যান্ত সুনামের সহিত ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে জনাব গোলাম সারোয়ার ভূইয়া আইআইডিএফসিতে যোগদানের পর লিড্স কর্পোরেশনের ব্যাংক আল্টিমাস সফ্টওয়ারটি বাস্তবায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই না অগ্রিম প্রদানকৃত টাকাও ফেরত নেওয়া হয়নি।
অপরদিকে ইরা ইনফোটেক লিঃ এর অরবিট সফ্টওয়্যারটি আইটি ও এইচআর ডিপার্টমেন্টের অনুমতি সাপেক্ষে লাইভে যায় এবং ইরা ইনফোটেক লিঃ কে তার পুরো কাজের ২৫,০০,০০০/- টাকা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ডাটাবেজসহ পুরো সফ্ওয়্যারের ইনস্টলেশন ফাইল সার্ভার থেকে মুছে ফেলা হয়, এমনকি কোন ব্যাকআপও রাখা হয়নি। বর্তমানে জনাব গোলাম সারোয়ার ভূইয়ার নিয়োগকৃত আইটি হেডের একটি দূর্বল সফ্টওয়ার কোর ফাইন্যান্স সফ্ওয়ার (সিএফএস) ব্যবহৃত হয়ে আসছে, যেটি ভিজুয়্যাল ব্যাসিক আই এসকিউএল ডাটাবেইজ এর ক্সতরী এবং এটি নিরাপত্তা খুবই নগণ্য, যা সম্পূর্ন আইটি হেড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই সফ্টওয়্যার সহজেই ট্যাম্পারিং করা যায়। তা ছাড়া এই সফ্টওয়্যার প্রায়ই ভূল তথ্য সরবরাহ করে যা কর্মরত অফিসারদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে। এছাড়া বিদ্যমান সফ্টওয়্যারটি ব্যাবহার করা কর্মচারীরা নানা সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছেন, যেমন এটি সফ্টওয়্যারবেইস হওয়ায় কোন আপডেট দিতে হইলে প্রত্যেক ইউজার এর কম্পিউটারে গিয়ে আপডেট ফাইল দিতে হয়। যদি কোন ইউজার কম্পিউটারে ভুলবশতঃ আপডেট ফাইল দেওয়া না হয় তবে এটি ভুল রিপোর্ট দেয়। কোম্পানীর ব্রাঞ্চগুলোর কর্মকর্তারা প্রায়ই এই সমস্যার সম্মুখীন হন।এই সফ্টওয়্যার অডিটটেল রিপোর্ট ক্সতরী করতে সক্ষম নয়, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটের বাধ্যতামূলক অংশ এবং এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। এখানে অডিটের জন্য একটি ডামি অডিটটেল আছে, যা মূলতঃ অকার্যকর শুধু দেখানোর জন্য। বিদ্যমান সফ্টওয়্যারটি ডেভেলপমেন্টের ত্রুটি থাকার কারণে ঘন ঘন হ্যাং হয়, যা ডেভেলপার মি. জয়ন্ত (হেড অব আইটি) এই সমস্যার সমাধান দিতে ব্যার্থ হয়েছেন। এতো সমস্যা থাকার পরও গোলাম সারওয়ার ভূ ইয়ার আধিপাত্যের কারণে আইআইডিএফসি লিডস কর্পোরেশন দ্বারা ক্সতরী ব্যাংক আল্টিমাস নামে ওয়েব-ভিত্তিক কোর ব্যাংকিং সফ্টওয়্যার ব্যবহার না কওে তিনি তার ইচ্ছেমতো স্বার্থহাসিলের উদ্দেশ্যে বর্তমান সফটওয়্যারটি ব্যবহার করেন। এতোসব অনিয়মের শুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে গোলাম সারওয়ারের বিদায়ের পূর্বে প্রতিষ্ঠানটির আইটি এবং এইচআর ডিপার্টমেন্ট নিরীক্ষা করা না হলে প্রতিষ্ঠানটি আরো ভয়াবহ ও অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুখিন হবে। কোম্পানীর আইসিসি ডিপার্টমেন্ট মূলতঃ বোর্ডের অডিট কমিটিকে রিপোর্ট করে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নয়। কিন্তু এখানে আইসিসি এর হেড এমন একজনকে করা হয়েছে যিনি ইতিপূর্বে কোম্পানীর চেক পোষ্টিং দিত এবং আইসিসি সম্পর্কে তার কোন ধারনাই নেই, এমনকি তার লেখা-পড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যাকগ্রাইন্ডের না। শুধুমাত্র গোলাম সারোয়ার ভূইয়া নিজের দূর্নীতি ঢাকার জন্য তাকে আইসিসির প্রধান করেন।
বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিশেষজ্ঞ দ্বারা আইটি নিরীক্ষা এবং এইচআর বিশেষজ্ঞ দ্বারা এইচ আর ডিপার্টমেন্ট নিরীক্ষা করে কোম্পানীর নানা অনিয়ম, দুর্নীতির সুষ্ঠ তদন্ত করে কোম্পানির ও দেশের স্বার্থে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযোগ কারি আজাদুর রহমান বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের প্রতি।
Posted ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪
Arthobiz | zaman zaman