
| বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট | 61 বার পঠিত
পবিত্র রমজান শেষে এলো খুশির ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদের আনন্দ ঘরে ঘরে। সমাজে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে প্রতিটি মুসলমানের কাছে ঈদের তাৎপর্য অপরিসীম। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। পরিবারের আপনজনদের সাথে ঈদ করতে মানুষ ছুটছে শহর ছেড়ে গ্রামে। বাস ট্রেণ ও লঞ্চে উপচে পড়া ভীড়। রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা। বছরে দুটি ঈদ উদযাপিত হয়। একটি ঈদ-উল-ফিতর এবং অপরটি ঈদ- উল- আযহা। ঈদ উল ফিতরকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অধিক গতিশীল। এক বছরের ব্যবধানে আসে এই ঈদ। ঈদের বাজার ছিল জমজমাট। রাজধানীর প্রতিটি বাজারে কেনাকাটায় উপচে পড়া ভীড়। রমজানের শুরুতেই প্রায় প্রতিটি ঘরে চলে ঈদের কেনাকাটার প্রস্তুতি। ঈদে ছোটদের নতুন জামা জুতা চাইই চাই। বড়দেরও কম নয়। সাধ্য অনুযায়ি সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ঈদে কিছু না কিছু কেনাকাটা করেন। ব্যবসায়িরা আগে ভাগেই নানা বাহারি পণ্যে দোকান সাজিয়ে বসে থাকেন। বছরে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় এই সময়ে। ব্যবসায়িরা বছরের সবচেয়ে বেশি আয়ও করেন এ মাসে। চাহিদা বৃদ্ধির সাথে পণ্যেও যোগান যেমন বাড়ে তেমন দামও বাড়ে । দাম বেশি হলেও বেচাকেনায় কোন কমতি দেখা যায় না। রমজানে অর্থনীতির চাকা আরও সচল হয়। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও ঈদের বাজার বেশ জমজমাট। গ্রামীন অর্থনীতিও এখন চাঁঙ্গা। গ্রামের মানুষও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কেনাকাটা করে। গ্রামের মানুষেরও আয় বেড়েছে। তাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, চাহিদা বেড়েছে, রুচির পরিবর্তনও ঘটেছে। শহরের মানুষের মতো গ্রামের মানুষও ঈদে কেনাকাটা করে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির কেউ না কেউ বিদেশে থাকে। প্রতি মাসে বাবা মা’র জন্য তারা টাকা পাঠান। ঈদ এলে কেনাকাটার জন্য বাড়তি টাকা পাঠানো হয়। ফলে ঈদের সময়ে গ্রামে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এই সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মূদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি পায় । অর্থনীতির জন্য এটি একটি সুখবর। তবে এই সুখবরের পাশাপাশি কিছুটা হতাশার খবরও রয়েছে। সমাজে এখনো এক শ্রেণীর মানুষের নুন আনতে পান্থা ফুরায় অবস্থা। স্বল্প আয়ের এ সব মানুষের জন্য ঈদ খুশির চেয়ে দু:খ কষ্ট বাড়িয়ে দেয় তাদেও পরিবারে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারে না এ সব মানুষ। তাদের আয় বাড়াতে পারে না। কিন্তু ব্যয় বেড়ে গেছে। বাজারে নিত্য পণ্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বর্তমানে কাচঁবাজারে তরিতরকারি শাকশবজির দাম কিছুটা কম। তবে এখনো দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক নয়। সব লোকের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে নাই। চাল আটা তেল মাছ মাংস এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে। ফলে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিওে আসে নাই। এ অবস্থায় ঈদ, তাদের জন্য খুশির চেয়ে কষ্টের দিকটাই বেশি।
ইসলাম শান্তির ধর্ম, সােেম্মর ধর্ম, সমতার ধর্ম, ভ্রাতৃত্তের ধর্ম। সমাজে দরিদ্র লোকের পাশাপাশি অনেক বৃত্তবান লোক আছেন। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন দেশে বর্তমানে ধনী লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। ঈদ ধনী দরিদ্র সকলের জন্য। ধনী লোকেরা একটু সহায়তার হাত বাড়ালে দরিদ্র লোকেরাও ঈদ আনন্দ উপলব্দি করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, ইসলাম ধর্মে জাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি ধনী মুসলমানের জন্য জাকাত দেয়া ওয়াজিব। সম্পদের সঠিক হিসাব করে জাকাত দেয়া হলে সমাজে দরিদ্র লোকদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে। এ জন্যই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন জাকাত দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। পবিত্র আল কোরআনে নামাজ ও জাকাতের কথা বার বার বলা হয়েছে। জাকাত সঠিক ভাবে দেয়া হলে ধনী দরিদ্রের মধ্যকার ব্যবধান কিছুটা কমে আসবে। আমাদের দেশে জাকাত নেয়ার অনেক লোক রয়েছে। তাদেরকে সরাসরি জাকাত দেয়া যেতে পারে। আবার সরকারি ভাবেও জাকাত দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যে কেউ ব্যাংকের মাধ্য তার জাকাতের অর্থ জাকাত বোর্ড অথবা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে দিতে পারেন। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম নামের এই প্রতিষ্ঠানটি মানবতার সেবায় নিয়োজিত। করোনাকালে এই সংগঠনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন দেশবাসী। এই সংগঠনের সদস্যরা জীবনের ঝুকি ানয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এই সংগঠনটির ব্যপক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। জাকাতের অর্থ এই সংগঠনে দান করা হলে মানবতায় সেবায় ব্যয় হবে।
এ বছর ঈদ যাত্রায় কিছুটা স্বস্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঈদ আসলে নাড়ির টানে নগরীর মানুষ গ্রামে ছুটেন পরিবারের সাথে ঈদ করতে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে তাই কষ্ট করে হলেও বেশির ভাগ মানুষ গ্রামের বাড়িতে যান। আর এতে সড়ক পথ রেলপথ ও নৌপথে যাত্রীচাপ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে যেমন দুর্ভোগ বাড়ে, তেমনি দুর্ঘটনার আশংকাও বেড়ে যায়। প্রশাসন আগে ভাগে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনার পরিমান অনেকটা কমে আসবে। তবে আশার কথা হচ্ছে, দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেকটা উন্নতি ঘটেছে। এ বছর চিরচেনা গাবতলি বাস্ট্যান্ড সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের চিত্র বদলে গেছে। ঈদে বাড়ি যাবার টিকিট সংগ্রহে তেমন ভীর নেই কোথাও। দেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। বন্ধ রেল লাইনগুলো পুনরায় চালু হওয়ায় চলাচল অনেকটা সহজ হয়েছে। যাত্রী ভোগান্তি কমেছে। একমাত্র সড়ক পথে নির্ভরতা কমে আসছে। এ জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। রেল ব্যবস্থার আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। চলাচলের জন্য রেল সার্ভিস অনেকটা নিরাপদ ও সহজলভ্য। মানুষ এখন অনেকটাই রেলের উপর নির্ভশীল। ফলে সড়ক পথে চাপ কিছুটা কম মনে হচ্ছে। ঈদের দু’একদিন আগে চাপ কিছুটা বাড়বে। এ সময়ে সড়ক পথে শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলেই যাত্রা নিরপদ হবে। ঈদ উপলক্ষে সকল পাঠক পাঠিকা বিজ্ঞাপনদাতা, শুভান্যুধায়ি ও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ”ঈদ মোবারক”।
Posted ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪
Arthobiz | zaman zaman