
| বুধবার, ২২ মে ২০২৪ | প্রিন্ট | 76 বার পঠিত
অর্থবিজ প্রতিবেদক :
স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ড. শেখ মহ. রেজাউল ইসলামকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। তিনি এর আগে আইডিআরএ’র পরিচালক (আইন) ছিলেন। আজ ২১ মে মঙ্গলবার অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ড. শেখ মহ. রেজাউল ইসলামকে প্রশাসক পদে এই নিয়োগ দেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপসচিব) আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বীমা আইন, ২০১০ এর ৮০ (৪) ধারার সুষ্পষ্ট লংঘন করায় বীমা আইন ২০১০ এর ৮০(৫) ধারা মোতাবেক অতিরিক্ত সচিব (অব) ড. শেখ মহ. রেজাউল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। তিনি আজ স্বদেশ ইসলামী লাইফের প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেছেন। তিনি কোম্পানিটির কার্যালয়ে পৌছুলে তাকে কোম্পানির চীফ অপারেটিং অফিচার (সিওও) জাহাঙ্গির আলম মোল্লা, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জেড কাওছার এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম মহিউদ্দিনসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
পরে কোম্পানির বোর্ডরুমে এক যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কোম্পানির চীফ অপারেটিং অফিচার (সিওও) জাহাঙ্গির আলম মোল্লা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সদ্য যোগানকারি প্রশাসক অতিরিক্ত সচিব (অব.) ড. শেখ মহ. রেজাউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জেড কাওছার এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম মহিউদ্দিন বাবলু।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. শেখ মহ. রেজাউল ইসলাম পেছনের সব কথা ভুলে সকলকে কাজে যোগদান এবং আজ থেকে হাতে হাত এবং কাঁধে কাঁধ রেখে একসঙ্গে কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করলে কোম্পানিটিকে একটি ভাল অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তিনি এ ক্ষেত্রে সকলকে সততার সঙ্গে কাজ করার আহবান জানান।
তিনি বলেন, আপনারা সকলেই জানেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে বীমা পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেছেন তিনি এই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। বঙ্গবন্ধু বীমা কোম্পানিতে কাজ করেছেন। বীমা পেশা এমন একটি পেশা, যে পেশার সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমরা জাতির জনকের আদর্শ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এই পেশার মর্যাদা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে কাজ করে যাব।
ড. শেখ মহ. রেজাউল ইসলাম যোগান অনুষ্ঠান শেষে অর্থবিজকে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তাঁর প্রথম কাজ হবে কোম্পানিটিকে সচল করা। গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় সারাদেশে কোম্পানির সকল অফিস পুনরায় সচল হবে এবং সকলে সততার সাথে কাজ করব। গ্রাহকের দাবি পরিশোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি মিডিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন।
কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপসচিব) আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত প্রশাসক নিয়োগ অফিস আদেশে বলা হয়েছে, প্রশাসক হিসেবে রেজাউল ইসলাম কোম্পানি হতে মাসিক সর্বসাকুল্যে দুই লক্ষ টাকা বেতন পাবেন। সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য ১টি গাড়ি (ড্রাইভারসহ), জ্বালানি ও গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের প্রকৃত খরচ কোম্পানি বহন করবে।
তাছাড়া তিনি সর্বমোট বেতনের ৬০% হারে দুটি উৎসব ভাতা, মাসিক মোবাইল বিল ও কোম্পানির প্রয়োজনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে টিএ/ডিএ বিল প্রাপ্ত হবেন। প্রশাসকের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদির উপর প্রদেয় আয়কর প্রশাসক নিজেই বহন করবেন। প্রশাসক বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন এবং সময় সময় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। প্রশাসক যে কোনো সময় বীমা ব্যবসায় পরিচালনার পদ্ধতি বা ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কালে উদ্ভূত যে কোনো বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। কোম্পানির ব্যাংক হিসাবসমূহ পরিচালনা প্রশাসক ও অন্য যে কোনো একজন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে।
জানা গেছে, স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বীমা কোম্পানিতে তার দায়িত্ব পানল না করাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করে। ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন আইডিআরএ’র অফিস আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (নং- ৩৪৪৭/২০২৪) দায়ের করেন। রিট পিটিশনটির শুনানি শেষে উচ্চ আদালত ২১ মার্চ, ২০২৪ ইং তারিখে আইডিআরএ’র আদেশে ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেয়। এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে আইডিআরএ’র করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্টের দেয়া ৬ মাসের স্থগিতাদেশে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেয়।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এনায়েতুর রহিমের চেম্বারে ১৩ মে সোমবার শুনানি শেষে আদালত এই স্থগিতাদেশ দেয়। এই আদেশের ফলে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীনের বিষয়ে আইডিআরএ’র দেয়া আদেশটিই কার্যকর থাকে। এর ফলে ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন স্বদেশ ইসলামী লাইফে দায়িত্ব পালন করার আর কোন সুযোগ ছিল না।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর আগে মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনকে স্বদেশ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসাবে দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় । স্বদেশ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যানকে দেয়া আইডিআরএ’র পরিচালক (আইন) মোহা: আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে (স্মারক নং ৫৩.০৩.০০০০.০৭১.২৭.০০১.২২.১৩৯) এই নিদের্শনা দেয়া হয়। পত্রে বলা হয়, স্বদেশ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের চাকরির মেয়াদ ৮ জুন, ২০২৩ ইং তারিখে উত্তীর্ণ হয়। উক্ত তারিখের পর ইখতিয়ার উদ্দির শাহিন কোম্পানির সিইও নন।
পত্রে বলা হয়, কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ একটি চুক্তি ভিত্তিক পদ, সেহেতু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর উক্ত পদে দায়িত্ব পালন করার আর কোন সুযোগ নেই। পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের পুন:নিয়োগ অনুমোদনের জন্য স্বদেশ লইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ বিগত ১০-০৫-২০২৩ ইং তারিখে আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি আবেদন করে।
কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে পলিসিহোল্ডারের প্রিমিয়াম জমাকরনের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও বেআইনি ভাবে ইনসেন্টিভ বোনাস গ্রহনের মাধ্যমে বীমা আইন লংঘন এবং বীমাকারী ও বীমা গ্রহীতার স্বার্থ পরিপন্থী কাজ করায় বিগত ০৩-০৮-২০২৩ ইং তারিখে ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের বিরুদ্ধে বীমা আইন ২০১০ এর ৫০ ধারার ১(খ) উপধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ কতিপয় নিদের্শনা প্রদান করে।
নিদের্শনা সমূহ হলো মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন স্বদেশ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং তিনি প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে স্বাদেশ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না।
পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ঐদ্ধত্তপূর্ণ আচরনের কারনে তাকে স্বদেশ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে পুন:নিয়োগ প্রস্তাব না মঞ্জুর করা হলো।
স্বদেশ ইসলামি লাইফ আইডিআরএ কর্তৃপক্ষের বিগত ১৭-০৮-২০২৩ ইং তারিখের সিদ্ধান্তটি পুন:বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে স্বদেশ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পষর্দের চেয়ারম্যান বিগত ২৪-০৮-২০২৩ ইং তারিখে নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের কাছে পুনরায় একটি আবেদন দাখিল করে। উক্ত আবেদনের প্রক্ষিতে বিগত ২৭-০৯-২০২৩ ইং তারিখে একটি রিভিউ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রিভিউ শুনানি শেষে ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের নিয়োগ নবায়নের পুনর্বিবেচনার আবেদন আইডিআরএ পুনরায় না মঞ্জুর করে। একই সাথে ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে পলিসি হোল্ডারের জমাকৃত প্রিমিয়ামের টাকা এবং কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী হিসাবে বেআইনি ভাবে নেয়া ইনসেন্টিভ বোনাস কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়ার নিদের্শনা প্রদান করা হয়। আইডিআরএ’র নিদের্শনা অনুযায়ি ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন ৩০-১০-২০২৩ ইং তারিখে ২৮,৭৫,০০০/= (আটাশ লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা) কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে বিগত ০৫-০২-২০২৪ ইং তারিখে পত্র মারফৎ আইডিআরএ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে।
ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র অফিস আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন Ñনং- ৩৪৪৭/২০২৪) দায়ের করেন। রীট পিটিশনটির শুনানি শেষে উচ্চ আদালত ২১-০৩-২০২৪ ইং তারিখে আইডিআরএ’র আদেশে ছয় মাসের জন্য সস্থগিতাদেশ প্রদান করে।
আইডিআরএ’র পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষের স্থগিতাদেশ প্রদানের আগেই স্বদেশ ইসলামি লাইফে মুখ্য নিবার্হী পদে মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের চাকরির মেয়াদ বিগত ৮ জুন, ২০২৩ ইং তারিখে শেষ হয়ে যাওয়ার পর স্বদেশ লাইফ কর্তৃপক্ষ কোম্পানির ৪৪ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি মো. জাহাঙ্গির আলম মোল্লাকে মুখ্য নিবার্হী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) পদে নিয়োগ দেয়। ফলে আইডিআরএ’র আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করার পরও মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব প্রদান ও তার দায়িত্ব পালন আইনসঙ্গত নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনকে দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত রাখার জন্য স্বদেশ ইসলামি লাইফ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
্
Posted ৫:৪১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২২ মে ২০২৪
Arthobiz | zaman zaman