অর্থবিজ প্রতিবেদক :
আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদন না-মঞ্জুর করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইতোমধ্যেই আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানকে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। চিঠিতে বীমা কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন কর্মকর্তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী ২০২১ সালের ২৭ জুন আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) পদে যোগদান করেন । কোম্পানিটির চেয়ারম্যান শেখ শামীম উদ্দীন ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মুখ্য নির্বাহী পদে আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন চেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করেন। আবেদন করার দুই বছর সাড়ে তিন মাস পর বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেছে।
আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ অনুমোদন আবেদনের সাথে তার দাখিলকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, কর্তৃপক্ষ দ্বারা তার পূর্বের দুটি কর্মক্ষেত্র হতে তদন্তপূর্বক প্রাপ্ত প্রতিবেদনসমূহের আলোকে জালিয়াতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ সংগৃহীত করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় সিইও পদে তার নিয়োগ প্রস্তাব না-মঞ্জুর করা হলো।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বীমা আইন, ২০১০ এর ৮০ (৪) ধারা মোতাবেক কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ একাধারে ৩ মাসের অধিক সময়ের জন্য শূন্য রাখা যাবে না। বিধায় ৩ মাস পূর্তির ১৫ দিন পূর্বে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা অনুযায়ী যোগ্য মুখ্য নির্বাহীর নিয়োগ প্রস্তাব এবং মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্নপদের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন কর্মকর্তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে (প্রমাণকসহ) কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

এর আগে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি শশাঙ্খ শেখর সরকার ও রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ ডিসেম্বর রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদন আদালতের আদেশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। বীমা কর্তৃপক্ষ আইডিআরএ আদলতের নির্দেশীত সময়ের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে।
বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ এর আলোকে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগের অনুমোদন প্রস্তাবের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ১৭৭তম সভায় আলোচনাক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়, আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি’র ১৬ তম পর্ষদ সভায় মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীকে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তিন বছরের জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে নিয়োগ অনুমোদনের জন্য আইডিআরএ চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করা হয় কোম্পানিটির চেয়ারম্যান শেখ শামীম উদ্দীনের পক্ষ থেকে। আবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়োগ চুক্তির কিছু শর্ত সংশোধনের জন্য চিঠি পাঠায় আইডিআরএ। সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করে আকিজ তাকাফুল। এর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষা সনদের আইনগত প্রামাণকসহ আবেদন করতে চিঠি দেয় আইডিআরএ।
প্রমাণক দাখিলের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মুখ্য নির্বাহী পদে আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ অনুমোদনের আবেদন নিষ্পত্তি না করে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে আইডিআরএ। আবেদনের পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদেক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাননি আলমগীর চৌধুরী বলে রীটে উল্লেখ করা হয়।
আইডিআরএ’র এই চিঠি দেয়ার মধ্য দিয়ে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদনের বিষয়টির নিষ্পত্তি হলো। এরআগে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষা সনদের বৈধতা নিয়ে একাধিক মিডিয়ায় খবরও প্রকাশ হয়। খবরটি আমলে নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার শিক্ষা সনদের বৈধতা যাচাই করে অবশেষে এই সিদ্ধান্ত দেয়।
এ বিষয়ে আলমগীর চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তার মোবাইলে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নি।