
| বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 110 বার পঠিত
অহিদুজ্জামান মিঞা :
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) নির্বাচন ফের বিতর্কীত করার গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। একটি মহল বিনা ভোটে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছে। এ মহলটি আজ বৃহস্পতিবার সমমনাদের নিয়ে একটি গোপন বৈঠক করেছে। বৈঠকটি প্রথমে বিআইএ’র হল রুমে হবার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনী আচরন বিধি ভঙ্গ করে এ ধরনের বৈঠক আয়োজনে আপত্তি উঠায় অবশেষে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক করা হয়।
বৈঠকে যোগদানকারিদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ভোট না করে অতিতের ন্যায় ২০ সদস্যের নির্বাহী কমিটি সমঝোতার মাধ্যমে করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। সূত্রটি জানায়, বিগত সময়ের মতো এ বছরও কোন ভোট না করে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে একটি অনির্বাচিত কমিটি গঠন করে বিআইএ’র নেতৃত্ব কুক্ষিগত করার চেষ্টা চলছে। তবে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি অপর একটি গ্রুপ এ ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার হুমকিও দিয়েছে। তারা বলেছেন, দেশে এখন স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় নেই। জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেশ গনতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের এই সদিচ্ছাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর নির্বাচন গনতান্ত্রিক ভাবে সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে দেশেগনতান্ত্রিক ভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ধারা সূচিত হবে। যেখানে স্বাধীন ভাবে ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। দেশে বর্তমানে যে কোন নির্বাচন গনতান্ত্রিক ভাবে অনুষ্ঠিত হবে, অতিতের মতো স্বৈারাচারি কায়দায় কোন বাণিজ্যিক সংগঠনের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা দেয়া হলে এটি হবে জুলাই বিপ্লবের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার সামিল। এমনটি সবার কাম্যও নয় বলে অভিমত ব্যাক্ত করেছেন অনেকে। তাদেও বক্তব্য, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা এখনো মাঠে সক্রিয় রয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। এর ব্যত্যয় ঘটলে ছাত্র জনতা কোন ভাবে ছাড় দিবে না।
জানা যায়, নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করে বুধবার বিআইএ হল রুমে প্রার্থীদের নিয়ে একটি অনানুষ্ঠানিক পরামর্শমূলক মতবিনিময় সভা ডাকা হয়।
বিআইএ’র নির্বাচনে কার্যনির্বাহী কমিটির ২০ সদস্যের জন্য ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। সকল মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় এখনও শেষ হয়নি। এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রার্থীদের নিয়ে এ ধরনের মতবিনিময় সভা ডাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রার্থী ক্ষেভ প্রকাশ করেছেন। ২২ জানুয়ারি বাছাই শেষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বৈধ মনোনয়ন পত্রের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর মোট ৩৫টি মনোনয়ন পত্র বিক্রয় ও জমা দেয়া হয়। বাছাই’র পর সকল মনোনয়ন পত্র বৈধ হয়।
জানা যায়, আজ বিআইএ’র প্রথম সহসভাপতি ও সিটি ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান হোসেন আখতার একটি চিঠি দিয়ে বৈঠকে যোগ দিতে নির্বাচনে প্রতদ্বরিাদ্বতাকারী প্রার্থীদের ডেকেন। চিঠিতে বলা হয়ে, বিআইএ-এর ইসি নির্বাচনে লাইফের ১০টি শূন্য পদে ১৪ জন এবং নন-লাইফের ক্ষেত্রে ১০টি শূন্য পদে ২১জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। বিআইএ-এর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববন্ধন ও সম্প্রীতি সুসংহত ও বজায় রাখাতে নির্বাচন প্রাক্কালে মনোনয়ন জমাদানকারীদের মধ্যে একটি পারস্পরিক সৗহার্দপূর্ণ পরামর্শমূলক মতামত বিনিময় ও প্রদানের জন্য এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অনুষ্ঠানের বিআইএ হলরুমে আয়োজন করা হয়েছে।
নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীতা চূড়ান্ত হওয়ার পর কোনো প্রার্থী অন্য প্রার্থীদের বিআইএ মিলনায়তনে নির্বাচন বিষয়ক পরামর্শের জন্য ডাকতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক প্রার্থী। এই মুহূর্তে এ ধরনের সভা ডাকায় ফের ১৪ বছর আগ থেকে শুরু হওয়া সমঝোতার নামে বিনা ভোটে নেতৃত্ব বেছে নেয়ার ফর্মুলা প্রয়োগের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রার্থী। তারা বলছেন, নির্বাচন চলাকালে প্রার্থীদেরকে নিয়ে খোদ বিআইএ মিলনায়তনে এভাবে পরামর্শ করার কোনো সুযোগ নেই। যদি ভোট নিয়ে কোনো পরামর্শ করতে হয়, সেক্ষেত্রে একমাত্র নির্বাচন কমিশনই এ ধরনের সভা ডাকতে পারে। কোনো প্রার্থী নয়। জানতে চাইলে নির্বাচনী বোর্ডের সদস্য আফতাব উল ইসলাম বলেন, ‘ইট’স ভয়োলেশন অব ইলেকশন রুলস’।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর উৎসবের আমেজ ফিরে এসেছে বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ’র নির্বাচন। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থী হয়েছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে লাইফ বীমার প্রার্থী রয়েছেন ১৪ জন এবং নন-লাইফে ২১ জন। উভয় খাতে ১০ জন করে মোট ২০ জন কার্য নির্বাহী সদস্য নির্বাচন করা হবে।
খাত সংশ্লিরা বলছেন, দীর্ঘ দিন পর এই নির্বাচনের মাধ্যমে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি দেশের বীমা খাতের জন্য খুবই ভালো। যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা বিআইএ’র দায়িত্বে আসলে তাদের নতুন চিন্তার সংমিশ্রণ বীমার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট পদ আকড়ে ছিলেন শেখ কবির হোসেন। শেখ কবির হোসেন শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই। সে হিসেবে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা। এসব পরিচয়েই তিনি বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ’সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদ আকড়ে ছিলেন। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পলায়ন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২১ অক্টোবর বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ কবির হোসেন।
বিআইএ’র বর্তমান নির্বাহী কমিটির (২০২৩-২০২৪) মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল। তবে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন পদত্যাগ করায় প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) অবশিষ্ট সময়ের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গত ২৮ অক্টোবর সংগঠনে ২১৮তম নির্বাহী কমিটির সভায় তিনি এ দায়িত্ব পান।
২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর বিআইএ’র ২০২৫-২০২৬ সালের নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়া হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী সদস্য নির্বাচনের পর ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট। এ বছর সংগঠনটির ৮০ জন সদস্যের মধ্যে ৭৬ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে জানা গেছে।
বৈঠক ডাকার মূল উদ্যোক্তা সিটি ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান হোসেন আখতারের একটি বক্তব্যের সমালোচনা করে নাম প্রকাশে একজন এমডি বলেছেন, নির্বাচন করলে যদি পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন কি করা যাবে না। গনতন্ত্রের জন্য এতোবড় লড়াইয়ের পর এ ধরনের ভাবনা সমিচিন নয়। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এটি কাম্য হতে পারে না। ভোট হলে ভিন্ন মত হতে পারে, তবে ভোটের পর আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করতে চাই। ভোটের মাধ্যমে সত্যিকার নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
Posted ৮:৩৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
Arthobiz | zaman zaman