
| বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ | প্রিন্ট | 149 বার পঠিত
অর্থবিজ প্রতিবেদক :
যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করে নাই বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ (ইড্রা)। এ দিকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (ইড্রা) এই আদেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে এবং তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদেনে আদালতের নিদের্শনা চেয়ে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল রীট করছেন উচ্চ আদালতে। খবর বিশ্বস্থ সূত্রের।
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের নিয়োগ প্রস্তাব না মঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। গত ০৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইডিআরএ’র ১৮২ তম বোর্ড সভায় ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত হয়। ইড্রা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নতুন করে উপযুক্ত কাউকে নিয়োগ দিয়ে অনুমোদনের জন্য ফাইল পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে যমুনা লাইফ কর্তৃপক্ষকে।
আইডিআরএ’র পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) উপসচিব আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন বিভিন্ন অনিয়ম সাধন, পূর্বসূরীদের অনিয়মের তথ্য গোপন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালনে ব্যর্থতা (বীমা আইন ২০১০ এর ১৩০(ক) ধারা লংঘন), স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য-কর্মে অবহেলা প্রদর্শন তথা ২০১৮ হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হুসেইন ফরহাদ এন্ড কোং কে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় অসহযোগিতার (অধিযাচিত তথ্য-উপাত্ত, রেকর্ডপত্র, প্রমাণক, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ও ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী সরবরাহ না করা, আত্মপক্ষ সমর্থনে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বক্তব্য প্রদান) মাধ্যমে বীমা আইন, ২০১০ এর ২৯ ধারামতে পরিচালিত বিশেষ নিরীক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাহত করেছেন।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালীন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল কার্যকলাপ ও আচরণের মাধ্যমে বীমা আইন, ২০১০ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে বীমাকারী ও বীমা গ্রাহকদের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করেছেন। এর ফলে কোম্পানি ও বীমাগ্রহীতাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে বিধায় বীমা আইন ২০১০ এর ৫০(১)(খ) ধারা মতে ২১/০৯/২০২৩ তারিখে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক (স্মারক নং: ৫৩,০৩,০০০০,০৩৬,০১,০০১,২৩,৩৬; তারিখ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ হতে অপসারণ করা হয়।
অপসারণ আদেশের বিরুদ্ধে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল, হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নং ১২২০৪/২০২৩ দায়ের করেন যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। উক্ত স্থগিতাদেশ ভ্যাকেট করতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ চেম্বার জজ আদালতে (সিপি) আপীল দায়ের করে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য পুনরায় হাইকোর্ট বিভাগে প্রেরণ করেন এবং আদালতে মামলাটি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। মামলাটি বর্তমানে চলমান এবং শুনানির জন্য অপেক্ষমান বিধায় বিষয়টি বিচারাধীন আছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলকে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বা অন্য কোন বীমা কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা সমীচীন নয় মর্মে কর্তৃপক্ষের ১৮২তম সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে প্রস্তাবটি বীমা কোম্পানি “মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ” প্রবিধানমালা-২০১২ (৭) (৬) অনুযায়ি না-মঞ্জুর করা হলো। চিঠিতে আরও বলা হয়, এতদসঙ্গে, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নতুন প্রস্তাব প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান বদরুল আলম খান এ বিষয়ে অর্থবিজকে বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি, বিষয়টি আইনগত, এখানে আমার একার পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। বোর্ড মিটিং করে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী করনীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ দিকে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল অর্থবিজকে বলেন, নিয়োগ মঞ্জুর না করে তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী কোনো মামলা চলমান থাকলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা যায় না। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত আমার অপসারণ আদেশ স্থগিত আছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অপসারিত বলার সুযোগ নেই।
তিনি লিখিত ভাবে জানান, আমি হোমল্যান্ড লাইফের চাকুরীতে যোগদান করি ২০২২ সালের ২৪ মে। আর ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের বিশেষ নিরীক্ষার অনিয়মের দায় আমার কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে ইড্রা বীমা আইন ২০১০ এর ১৩৪ ধারায় কারণ দর্শিয়ে ১৩৪ ধারার কার্যক্রম শেষ না করে ৫০(১)(খ) ধারার আওতায় আমাকে হোমল্যান্ড লাইফের চাকুরী থেকে অপসারণ করে, যা ছিল সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি। আমার অপসারনের বিষয়টি আমি মহামান্য হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করলে আদালত ঐ অপসারণ আদেশটিতে স্থগিতাদেশ দেন। পরবর্তীতে ইড্রা চেম্বার জজ আদালতে ও আপিল বিভাগে স্থগিতাদেশটি ভ্যাকেট চেয়েও পায়নি। বরং মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে মেরিট বেসিসে নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেয় এবং রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত একটি স্থিতিব্যস্থা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো মামলা চলমান থাকলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে দোষী বলা যায় না। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত আমার অপসারণ আদেশ স্থগিত আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অপসারিত বলার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, বীমা আইনের ২০১২ সালের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালার ধারা ৭ মোতাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অপসারনের এখতিয়ার একমাত্র বীমা কোম্পানির। এই ধারা মোতাবেক বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণ ক্ষমতা ইড্রার নেই। আমার আবেদন না-মঞ্জুর করে আমার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তার জন্য গত ১৬ এপ্রিল ন্যায় বিচার চেয়ে আমার আইনজীবীর মাধ্যমে ইড্রায় ডিমান্ড অব জাস্টিস নোটিশ পাঠিয়েছি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বীমা কোম্পানিটি আমাকে কখনও অপসারন করে নাই। আমি হোমল্যান্ড লাইফ থেকে চুক্তি পত্রের শর্ত মোতাবেক অব্যাহতি নিয়ে চলে আসি। আমি হোমল্যান্ড লাইফ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে এসেছি। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালা ২০১২ এর ধারা ৭(৬) এর অপব্যাখ্যা করে তার আওতায় কর্তৃপক্ষ আমার নিয়োগ না-মন্জুর করতে পারে না। অন্য কোনো কোম্পানিতে আমার চাকরী করার ক্ষেত্রে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। ইড্রা এই চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে প্রদত্ত তার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন।
Posted ৫:৪১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
Arthobiz | zaman zaman