বৃহস্পতিবার ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতার বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন : আকিজ তাকাফুল লাইফের সিইও পদে আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে আইডিআরএ ফের আবেদন

  |   মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   424 বার পঠিত

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতার বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন :  আকিজ তাকাফুল লাইফের সিইও পদে  আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ অনুমোদন  চেয়ে আইডিআরএ ফের আবেদন

অর্থবিজ প্রতিবেদক :
আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে আবেদন করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পষর্দের চেয়ারম্যান। এর আগেও তার নিয়োগ অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু বীমা আইন- ২০১০ এর আলোকে প্রণীত বীমা প্রতিষ্ঠানে সিইও পদে নিয়োগ নীতিমালার পূনার্ঙ্গ শর্তসমূহ পূরন না হওয়ায় সে সময়ে তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করে নাই আইডিআরএ। সিইও নিয়োগ প্রবিধানমালার শর্তসমূহের মধ্যে আলমগীর চৗধুরীর শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতার ঘাটতি ছিল। সেই ঘাটতি এখানো পুরোপুরি পূরন হয় নাই, তারপরও কেন কিভাবে উপযুক্ত অন্য কাউকে নিয়োগ না দিয়ে পরিচালনা বোর্ড আলমগীর চৌধুরীকেই নিয়োগ দিয়েছে সেটি অনেকের বোধগম্য হচ্ছে না। এ নিয়ে বীমা খাতের সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা প্রশ্ন তুলেছেন।
আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আকিজ তাকাফুল ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে আলমগীর চৌধুরীকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে দেয়া নিয়োগ অনুমোদনের আবেদন করেন। এই আবেদন পত্রের সঙ্গে দেয়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয় ¯œাতকোত্তর পাস। এতে দেখা যায়, আলমগীর চৌধুরী ২০০৩ সালে দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা থেকে ¯œাতক পাস এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর আগের কর্মস্থলগুলোতে দেয়া জীবন বৃত্তান্তে দেখা যায়, আলমগীর চ্যেধুরী ১৯৮৯ সালে ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৯১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
আলমগীর চ্যেধুরী স্বদেশ ইসলামী লাইফের চাকরির জন্য ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দাখিল করা জীবন বৃত্তান্তের সাথে দেয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রে সর্বশেষ শিক্ষাগত ডিগ্রি দেখান ডিগ্রি পাস। জমা দেয়া শিক্ষা সনদ অনুযায়ি তিনি ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাস করেন। এর আগে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে চাকরির জন্য জমা দেয়া জীবন বৃত্তান্তে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেন বিকম পাস। এ সময় তিনি ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি পাসের কোন শিক্ষা সনদ দেখান নাই। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ এবং এমবিএ পাসের দাবি করেন সেই বিশ্ববিদ্যলয়টির বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই। নানা অনিয়ম ও ভূয়া শিক্ষা সনদ বিক্রয় করার অভিযোগে অনেক আগেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বীমা খাতের অভিজ্ঞ জনেরা মনে করেন, তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আগে এ সব বিষয় যাচাই বাছাই করে দেখা উচিৎ। ভূয়া শিক্ষা সনদ দেখিয়ে কেউ পার পেয়ে গেলে এর দায় দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই নিতে হবে।
দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা অ্যালামোনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উজ্জল অর্থবিজকে বলেন, ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যলয়টি বন্ধ হওয়ার আগ পযর্ন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সর্বমোট ২৪১ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি লাভ করেছে। এদের মধ্যে আলমগীর নামে কেউ নেই।
অর্থবিজ এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলমগীর চৗধুরী ২০২১ সালের ২৭ জুন আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যাগদান করেন। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বীমা কোম্পানিটির ১১তম পর্ষদ সভায় তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই হিসাবে ২০২১ সালের ২৭ জুন থকে ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত তিনি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে মাত্র এক বছর তিন মাস দায়িত্ব পালন করেন। বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন পেতে এই পদে তাকে কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনীয় সেই অভিজ্ঞতা তার ছিল না।
জানা গেছে, আলমগীর চৌধুরী আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদান করার আগে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। এই কোম্পানিতে তিনি সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদান করেন। দায়িত্ব পালনের এক পযার্য়ে ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ট্রাস্ট লাইফ কর্তৃপক্ষ তাকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়। এই কোম্পানিতে উক্ত পদে তিনি ২ বছর ছয় মাস চাকরি করেন। ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত পদ হচ্ছে অতিরিক্তি ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু আলমগীর চৌধুরী কখনো এই কোম্পানিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে দায়িত্ব পালন করেন নাই। কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ হচ্ছে তৃতীয় ধাপের। আলমগীর চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, তিনি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে মুখ্য নির্বাহীর অধিন সরাসরি দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি তাকাফুল ইসলামী লাইফে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদান করেন। তবে তার দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমানাদি মিলে নাই। অনুসন্ধানে জানা গেছে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে ডিএমডি পদে তার দায়িত্ব পালনকালে কোম্পানিটিতে কোন মুখ্য নির্বাহী (সিইও) ছিলেন না। এই পদটি শূন্য থাকায় কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করেন। আলমগীর চৌধুরী এই ভারপ্রাপ্ত এমডির অধিনে ডিএমডি ছিলেন। তিনি অনুধাবন করতে পারেন নাই, ভারপ্রাপ্ত এমডি এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সমমর্যাদার পদ নয়। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র অনুমোদন প্রাপ্ত। আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়া কেউ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নন। প্রকৃত পক্ষে আলমগীর চৌধুরী কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অধিন নয়, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অধিনে দায়িত্ব পালন করেছেন। সে কারনে তিনি যে দাবি করেছেন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে তিনি ভারপ্রাপ্ত এমডির অধিনে ডিএমডি পদে দায়িত্ব পালন করে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নি¤œ পদ ডিএমডি পদে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ নীতিমালার পেশাগত শর্ত পূরন করতে সক্ষম হয়েছেন, তার এই দাবি সঠিক নয়। তার এই দাবি আমলে নিয়ে তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে কোম্পানির পরিচালনা পষর্দের নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করা হলে বীমা আইনে-১০ এর আলোকে প্রণীত মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ নীতিমালা লংঘিত হবে। এতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আইডিআরএ’র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। যদিও এমন ঘটনা কখনো কখনো ঘটছে। তথাপি বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই সেক্টরের ভাবমূর্তি রক্ষায় নিজেদের প্রণীত আইন ও নীতিমালা অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে মেনে চলতে হবে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের মে মাসে বিচল্যান্ড ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড নামে এই জীবন বিমা কোম্পানিটি অনুমোদন পায় । কিছুদিনের মধ্যেই কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে করা হয় আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স নামে ব্যবসা শুরু করে। সে সময়েও ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন আলমগীর চৌধুরী। ব্যবসা শুরুর প্রথম বছরে প্রিমিয়াম আয় করে মাত্র ৫৩ লাখ ২৪ হাজার ৫৭৩ টাকা। এ আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করেছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৮ টাকা। এতে শুরুতেই কোম্পানির লাইফ ফান্ড দুর্বল হয়। দুর্বল ম্যানেজমেন্টের কারনে এ অবস্থা এখনো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়নি এই বীমা কোম্পানিটি।

 

 

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৫০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

Arthobiz |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক : অহিদুজ্জামান মিঞা
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: খান ম্যানশন, ৮-ই, ২৮/এ-৫, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: arthobiz61@gmail.com
যোগাযোগ: 01670045191