শুক্রবার ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের ডেপুটি কন্ট্রোলার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ঢালাও অভিযোগ, সাধারণ বীমার পরিচালক হবার পর এখন ইড্রারও সদস্য হতে চান!

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   316 বার পঠিত

বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের ডেপুটি কন্ট্রোলার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ঢালাও অভিযোগ, সাধারণ বীমার পরিচালক হবার পর  এখন ইড্রারও সদস্য হতে চান!

বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের আলোচিত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালক হবার পর এখন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের (ইড্রা) সদস্য হতে চান। গত ১৭ অক্টোবর তিনি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালনা বোর্ডের পরিচালক হিসেবে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। এ পদে নিয়োগ লাভের মাত্র তিন সপ্তাহের মাথায় এসে দিনি ইড্রার সদস্য হতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। এ দিকে সাধারণ বীমায় সদ্য নিয়োগ পাওয়া পরিচালক মিজানের নিয়োগ অবিলম্বে বাতিলের দাবী জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির এক জনৈক কর্মকর্তা। সাধারণ বীমার কর্পোরেশনের কর্মকর্তা মো. সুমন আল আমিন অর্থ উপদেষ্টার দফতরে দেয়া এক অভিযোগ পত্রে এই দাবী জানান। অভিযোগ পত্রের একটি কপি অর্থবিজ কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
অভিযোগকারি কর্মকর্তা মো. সুমন আল আমিন তার অভিযোগ পত্রে বলেন, বির্তকীত সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের ডেপুটি কন্ট্রোলার ছিলেন। বীমা অধিদপ্তরে দায়িত্বপালনকালে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, কমিশন বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগের কারনে ২০১১ সালে গঠিত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষে (আইডিআরএ) তার ঠাই হয়নি। অথচ বীমা অধিদপ্তরে কর্মরতদের প্রায় সকলে আইডিআরএ’তে যোগদান করেন। তাকে প্রথমে মন্ত্রনালয়ে আত্মীকরন করা হয় এবং পরবর্তীতে তাকে শিপিং কর্পোরেশনে দেয়া হয়। শিপিং কর্পোরেশনে দায়িত্ব পালনকালেও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে। তাকে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। অবসরে যাবার অনেক পর তিনি এনআরবি লাইফে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান। এই নিয়োগ পাওয়ার পেছনে একটি জীবন বীমা কোম্পানির এক এমডি মূল ভূমিকা রাখেন। তাকে কিছু দিনের মধ্যে এনআরবি লাইফের ভারপ্রাপ্ত এমডি করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই এই কোম্পানিতেও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের আভিযোগ উঠে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের ঘটনায় বীমা কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ তাকে কোম্পানি থেকে বের করে দেন। এর পর তিনি নানা লবিং করে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালনা বোর্ডের পরিচালক নির্বাচিত হন। এখন তিনি আইডিআরএ’র সদস্য হতে জোর তদবির চালাচ্ছেন।
সুমন আল আমিন অভিযোগে বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের ডেপুটি কন্ট্রোলার মিজানুর রহমান গত ১৭ অক্টোবর সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালনা বোর্ডের পরিচালক হিসেবে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। চিহ্নিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর এই অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মিজানকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালক পদে দেয়া নিয়োগ অবিলম্বে বাতিলের দাবী জানান।
অর্থ উপদেষ্টা বরাবর লেখা অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, মো. মিজানুর রহমান বীমা অধিদপ্তরে ডেপুটি কন্ট্রোলার পদে দায়িত্ব পালনকালে একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসাবে বীমা সেক্টরে পরিচিত ছিলেন। বীমা অধিদপ্তরে যোগদানের পর থেকে বীমা কোম্পানীর এজেন্ট লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন নিয়ে কাজ করতেন। বীমা কোম্পানিগুলোতে প্রতিটি এজেন্ট লাইসেন্স অনুমতির ক্ষেত্রে মিজানের স্বাক্ষর প্রয়োজন হতো। প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে হাজার হাজার এজেন্ট অনুমতির জন্য প্রতিটি ফাইলে ২ টাকা করে ঘুষ নিতেন তিনি। বীমা প্রতিষ্ঠানের এমডি নিয়োগ, নবায়ন, প্রতিষ্ঠানের গাড়ি কিংবা জমি ক্রয়ের অনুমতির ক্ষেত্রেও মোটা অংকের ঘুষ নিতেন। এমনকি গণ বীমা, জন বীমা, সার্বজনীন বীমা- এমন বিভিন্ন বীমা প্রকল্পের অনুমোদন নেয়ার ক্ষেত্রেও মিজানকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতো হতো। টাকা ছাড়া তার টেবিল থেকে কেউ কখনো ফাইল নিতে পারে নাই। শুধু তাই নয়, বীমা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও এমডিদের ফোন করে তিনি বিভিন্ন লোকজনকে চাকুরী দিতে চাপ চাপ প্রয়োগ করতেন। সেক্ষেত্রেও ঘুষ নিয়ে মিজান বীমা কোম্পানীতে চাকুরী বাণিজ্যে লিপ্ত ছিলেন। এরমধ্যে সান লাইফের সাজ্জাদুল ইসলাম, প্রগতি লাইফের নুরুজ্জামান, গোল্ডেন লাইফের আলমগীর হোসেন ও প্রয়াত নজরুল ইসলাম শাহিনের কাছ থেকে ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে তিনি ওই সব প্রতিষ্ঠানে চাঁপ প্রয়োগ করে এদের চাকুরী দিয়েছেন।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, অপরাধের মাত্রা বাড়তে বাড়তে তৎকালীন সময়ে আদালতে ‘রীট’ বাণিজ্যেও জড়িয়ে পরেন মো. মিজানুর রহমান। পপুলার লাইফ, পদ্মা লাইফ কিংবা সানলাইফ- সকল প্রতিষ্ঠানের রীটের নেপথ্যে ছিলেন এই মিজান। পপুলার লাইফের সাবেক এমডি মুফতি এম এ আজিজ প্রতিষ্ঠান নিয়ে আদালতে ‘রীট’ করলে সেখানেও ভয় দেখান মিজান। তাকে ম্যানেজ করতে সে সময়ে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ঘুষ দিতে হয়েছে। পপুলার লাইফ থেকে নেয়া সেই ফ্ল্যাটে এখন বসবাস করছেন তিনি। মিজানের এই অপরাধ, অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিলো অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। মিজানের আমলনামা খতিয়ে দেখতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সে সময়ের চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। প্রতিটি বীমা কোম্পানীতে এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পরবর্তিতে সেই তদন্ত কার্যক্রম অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তদন্তর সেই বিশেষ ফাইলটিও আইডিআরএ থেকে গায়েব করা হয়।

সুমন আল আমিন অভিযোগে আরো জানান, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে চাকুরী করতেন মিজান। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে শিপিং কর্পোরেশন থেকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় আইডিআরএতে। এখানে এসে তিনি আরো বেশি বেপরোয়া ও দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠেন। পুরো বীমা খাতকে অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যান।
বীমা অধিদপ্তরে চাকুরী শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পর তিনি এনআরবি ইসলামিক লাইফের ‘এডভাইজার’ হিসেবে যোগদান করেন। পরে তাকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয়া হয়। মাত্র ২ মাস দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় এনআরবি লাইফে ‘বীমা আইন লংঘন, অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠলে’ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় তাকে ‘বাধ্যতামূলক অব্যাহতি’ দেয়া হয়। এরপর মিজানের চোখ যায় সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের প্রতি। বিশেষ ‘তদবির এবং অর্থ ব্যয় করে’ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালক পদ বাগিয়ে নেন। এখন তার দৃষ্টি পড়েছে আইডিআরএ’র দিকে। এই নিয়ন্ত্রক সংস্থায় বর্তমানে চারটি সদস্য পদের সব কটি পদ শূন্য। এখানে অবিলম্বে নতুন সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। মিজান এখন আইডিআরএ’র সদস্য হতে উঠে পড়ে লেগেছে। মিজান আইডিআরএ’র সদস্য হলে বীমা সেক্টরে আবারও লাগামহীন দুর্নীতি শুরু হবে। কোম্পানিগুলোর ম্যানেজমেন্ট খরচ বেড়ে যাবে। প্রতি মাসে তাকে মাসোহারা দিতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, অপরাধ, অনিয়ম, দুর্নীতির করে অবৈধ উপায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মো. মিজানুর রহমান। রাজধানীর পূবাইল, উত্তরা, গাজীপুর, নরসিংদী ও কেরানীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে করেছেন অসংখ্য প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে ছাগলকান্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সাথে এই মিজানুর রহমানের রাজধানীতে যৌথ সম্পদ ও প্লট রয়েছে। যা দুদক এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করলে সকল সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।
এক সময় ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ট হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন মো. মিজান। আওয়ামী বিভিন্ন নেতা, একাধিক এমপি এবং প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের পরিচয় দিয়ে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে এখন ভোল্ট পাল্টিয়েছেন এই হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল। এখন তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, এমন পরিচয় ব্যবহার করেন।
স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মা মো. মিজানের সকল কর্মকান্ড তদন্ত করে, কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের নিয়োগ বাতিল এবং যথাযথ শাস্তি দাবী করা হয় অভিযোগ পত্রে। লিখিত এই অভিযোগের অনুলিপি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। এই অভিযোগ পত্রের একটি কপি অর্থবিজ পত্রিকা অফিসে এসেছে।
অভিযোগের বিষয় জানতে তার মোবাইল ০১৭১৫-০০৭৪৯২ নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি। এ কারনে তার কোন বক্তব্য প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত করা সম্ভব হলো না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

Arthobiz |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক : অহিদুজ্জামান মিঞা
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: খান ম্যানশন, ৮-ই, ২৮/এ-৫, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: arthobiz61@gmail.com
যোগাযোগ: 01670045191