শুক্রবার ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

জাতীয় বীমা দিবসের ভাবনা

  |   সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   194 বার পঠিত

জাতীয় বীমা দিবসের ভাবনা

অর্থবিজ ডেস্ক :
বীমা খাতে আশার আলোর চেয়ে হতাশার খবর বেশি। এই খাত নিয়ে খোদ সরকারও আশাবাদি হতে পারছে না। বীমা খাতের উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এর সুফল পাচ্ছে না বীম গ্রাহকরা। কেন এমন হচ্ছে, এ প্রশ্ন এখন সামনে চলে আসছে। বীমা ব্যবসা প্রসারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে জাতীয় বীমা দিবস। বর্তমান সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিগত চার বছর এ দিবস পালিত হয়েছ্।ে বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও জাতীয় বীমা দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। আগামী ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস পালিত হবে। ১৯৬০ সালের ১ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালিন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন। বীমা কোম্পানিতে বঙ্গবন্ধুর চাকরি করার সেই মুহূর্তটিকে স্মরনীয় করে রাখতে প্রতি বছর বীমা দিবস পালন করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য বীমা খাতে কর্মরতদের আরও আত্মপ্রত্যয়ী ও উৎসাহিত করা। দিবসটিকে সুন্দর ভাবে পালন করতে অর্থমন্ত্রনালয়ের আর্থিক বিভাগ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ নানা আয়োজন করেছে। এ দিন সকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধন ঘোষনা করবেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জাতীয় বীমা দিবসের কর্মসূচী পালিত হবে। দিবসটি সামনে রেখে বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু বীমা খাতের আস্থার সংকটের ঘাটতি দুর হচ্ছে না।
দেশে বীমা বাজারের তুলনায় কোম্পানির সংখ্যা অধিক হওয়ায় ব্যবসা আনতে কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। ব্যবসায়ে টিকে থাকতে কোম্পানিগুলো অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর বড় সমস্যা অতিরিক্ত কমিশন দেয়া। কোন ব্যবসা আনতে নির্ধারিত এজেন্ট কমিশনের চেয়ে অনেক বেশি কমিশন দিতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। কাগজপত্রে কমিশনের হার ঠিক দেখানো হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বিষয়টি সবাই জানেন। সকল মহল এ ধরনের অবৈধ কমিশন দেয়া বন্ধ চান। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও বীমা কোম্পানিগুলোকে বার বার সতর্ক করে দিয়েছে। বীমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ বীমা এসোসিয়েশন (বিআইএ) অবৈধ কমিশন ব্যবসা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই অবৈধ কমিশন ব্যবসা বন্ধ হয়নি। কোম্পানিগুলো এ ধরনের অবৈধ কমিশন বন্ধ করার প্রয়োজন অনুভব করে নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে একাধিকবার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বীমা ব্যবসায়িদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ) এবং বীমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন ইন্স্যুরেন্স ফোরামের আরও উদ্যোগি হওয়া উচিৎ। নন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসায়ে অতিরিক্ত কমিশন দেয়ার জন্য ছোট বীমা কোম্পানিগুলো বড় বীমা কোম্পানিকে দায়ি করছে, আবার বড় কোম্পানিগুলো ছোট কোম্পানিগুলোকেই দায়ি করছে। তবে কোম্পানিগুলো দাবি করছে, এ ভাবে অবৈধ কমিশন দেয়া বন্ধ করতে না পরলে এ ব্যবসায়ে টিকে থাকা যাবে না। সবাই অতিরিক্ত কমিশন দেয়া বন্ধ করতে চায়। কিন্তু কেউ বন্ধ করে না। তারা স্বীকার করছে এতে কোম্পানির আর্থিক ভিত দুর্বল হচ্ছে।
লাইফ কোম্পানিগুলোর চিত্র আরও খারাপ। বীমা দাবি পরিশোধ না করার প্রবনতা বেশির ভাগ কোম্পানির। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ করার বিধান থাকলেও মাসের পর মাস গ্রাহকদের ঘুরতে হচ্ছে। অনেকে দাবি পাচ্ছেন না। নানা অজুহাতে তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অনেক কোম্পানির দাবি পরিশোধ করার সক্ষমতাও নেই। লাইফ ফান্ড নেই। এমনকি পরিশোধিত মূলধন তুলেও খেয়ে ফেলছে। এ ধরনের কোম্পানিতে বীমা করে গ্রাহকেরা প্রতারিত হচ্ছেন। সাধারণ জনগন কোম্পানি সম্পর্কে তেমন ভাল কিছু জানে না। উন্নয়ন কর্মীরা তাদেরকে নানা ভাবে বুঝিয়ে সত্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি বীমা করাচ্ছে। কিছুদিন পর সেই উন্নয়ন কর্মী কোন দায়দায়িত্ব নিচ্ছে না। মিডিয়াতে বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে খবর আসছে। জনমনে বীমা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা সৃষ্টি হচ্ছে। বীমা ব্যবসা প্রসারে বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন। কিন্তু বীমা কোম্পানিগুলো প্রচারে না যেয়ে কোম্পানির কর্মীদের নিয়ে ফাইভ স্টার থ্রিস্টার হোটেলে বিলাসী সম্মেলন করে ম্যানেজমেন্ট ব্যয় বাড়াচ্ছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ ক্ষেত্রে কিছুটা অসহায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান জনবল দিয়ে এতো অধিক সংখ্যক বীমা কোম্পানির কর্মকান্ড তদারকি করাও দুরহ ব্যাপার। দেশে বর্তমানে লাইফ ও নন-লাইফ দিয়ে ৮২ টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের তুলনায় বীমা কোম্পানির সংখ্যা অধিক হওয়ায় অসুস্থ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় আরও নতুন বীমা কোম্পানি অনুমোদন দেয়া হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু কোম্পানির দেউলিয়া ঘোষণার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ সকল কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারিরা ঠিক মতো বেতন ভাতাও পান না। মাঠ পযার্য়ের উন্নয়ন কর্মীরা যা কিছু প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেন, তা বেতন ভাতা হিসাবে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। লাইফ ফান্ডে কোন অর্থ জমা পড়ে না। গ্রাহক নিজেও জানেন না তার পলিসির ভাগ্যে কি আছে। মেয়াদ শেষে এ গ্রাহকের টাকা ফেরত পাবার সম্ভাবনা খুব কম। কোন কোন কোম্পানির চেয়ারম্যান পরিচালক এমডির বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও উঠছে। একটি লাইফ কোম্পানির সাবেক দুই চেয়ারম্যান অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জেলে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। শত চেষ্টা করেও কোম্পানির টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির লাখ লাখ গ্রাহক বীমা দাবির টাকা পাচ্ছেন না। কোম্পানিটির পরিচালনা বোর্ড ও ম্যানেজমেন্ট বদলে ফেলা হলো, কোম্পানিটির পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। নতুন কোন ব্যবসা আসছে না। কোম্পানির বীমা গ্রাহকরা তাদের কোন দাবিই পাচ্ছে না। এ কোম্পানিতে বীমা করে লাখ লাখ গ্রাহক প্রতারিত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, সবকিছু শেষ হবার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যবস্থা নিয়েছে। সময় মতো আগে ভাগে কেন এমন ব্যবস্থা নেয়া হলো না। কোম্পানিটির এ ঘটনায় অন্য কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়েও ভাটা পড়েছে। এখন কেউ বীমা করতে চায় না। পলিসি বিক্রি করতে যেয়ে বীমা কর্মীদেরকে তোপের মুখে পড়তে হয়। বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বলা চলে তালা ঝুলছে। অফিসে লোক নেই। এমডি নেই দীর্ঘদিন। এটি এখন সাইনবোর্ড সবর্স্ব একটি বীমা কোম্পানি হয়েছে। জানা যায় তৃণমূল পযার্য়ে এখনো এ কোম্পানির নামে কিছু পলিসি বিক্রি হচ্ছে। এই টাকা কোম্পানির হিসাবে জমা হয় না। এ ভাবে জনগন প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। স্বদেশ লাইফের প্রধান কার্যলয় জনশূন্য। ব্যবসা বন্ধ। শুধু শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক জন কর্মকর্তা অফিসে আসেন। প্রশাসনিক ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ কোম্পানির নিবন্ধন ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছ্ ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বিগত দিনের পরিচালনা বোর্ড ও ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুনীর্তির অভিযোগ উঠেছে।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানসহ ৬০ জনকে দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলব করা হয়। কিছু কিছু কোম্পানিতে পরিবার তন্ত্র গড়ে তোলা হয়েছে। বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য পরিবারের হওয়ায় সব কিছু নিজেদের মতো করে করা হয়। দুর্বল বীমা কোম্পানিগুলোকে মার্জ করার কথা অনেক দিন ধরে শুনা যাচ্ছিল। ব্যাংক সেক্টরে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বীমা সেক্টরেও এটি কার্যকর হওয়া উচিৎ।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সদ্য অপসারিত সিইও’র নিয়োগ প্রস্তাব বিগত দিনে অনুমোদন দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফারইস্ট লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ এবং বায়রা লাইফের মতো বীমা কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও কঠোর অবস্থান নেয়া উচিৎ। এ সব কোম্পানিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে এ খাতে একটি শৃঙ্খলা ফিরে আসার পথ সুগম হবে।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

Arthobiz |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক : অহিদুজ্জামান মিঞা
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: খান ম্যানশন, ৮-ই, ২৮/এ-৫, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: arthobiz61@gmail.com
যোগাযোগ: 01670045191