
| বুধবার, ১৪ মে ২০২৫ | প্রিন্ট | 387 বার পঠিত
অর্থবিজ প্রতিবেদক :
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের (ইড্রার) সদস্য (লাইফ) আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাক্ষিক অর্থবিজ পত্রিকার একজন সাংবাদিক তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি রিপোর্টের বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ বুধবার (১৪ মে) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে আইডিআরএ যান। এ সময় অনেক কর্মকর্তা সবেমাত্র অফিসে ঢুকছিলেন। অফিসে এক এক করে অফিসারদের ঢুকা দেখে তিনি কিছু সময় অর্ভ্যথনা কক্ষে বসে অপেক্ষা করেন। এরকিছু সময় পর তিনি সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে অফিসে অর্ভ্যথনা কক্ষে কর্তব্যরত একজন অফিস কর্মীর কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে আপেল মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। অফিস কর্মী তার ডেক্সের ইন্টারকমে আপেল মাহমুদকে বলেন, স্যার আপনার কাছে একজন লোক এসেছেন তিনি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান। এ সময় আপেল মাহমুদ তার পরিচয় জানতে চান। অফিস কর্মী সাক্ষাৎ প্রার্থীর পরিচয় জানালে আপেল মাহমুদ তাকে বলেন, উনাকে বলে দেন স্যার চেয়ারম্যানের সঙ্গে মিটিংয়ে আছেন। অথচ এ সময়ে ইড্রার চেয়ারম্যান অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। আপেল মাহমুদ এ সময় নিজ কক্ষেই ছিলেন। চেয়ারম্যান ড. আসলাম আলম তখনো অফিসে আসেন নাই। চেয়ারম্যান ড. আসলাম আলম আজ বুধবার সকাল ১১টা ০৯ মিনিটে অফিসে প্রবেশ করেন। এর ১৯ মিনিট আগে আপেল মাহমুদ তার নিজ কক্ষে বসে কি ভাবে বলেন, চেয়ারম্যানের সঙ্গে তিনি মিটিং করছেন। আর চেয়ারম্যান অফিসে থাকলে এবং তার সঙ্গে মিটিংয়ে থাকলে ইন্টারকম ফোন রিসিভ করার কথা নয়। অর্ভ্যথনা কক্ষ থেকে বলে দিবে স্যার রুমে নেই। ইন্টারকম থাকে প্রত্যেকের টেবিলে। অন্য কোন রুমে থাকলে নিজের ইন্টারকম রিসিভ করার সুযোগ থাকে না।
আপেল মাহমুদ কিছু আড়াল করতে যেয়ে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। তিনি কথা বলেন নিজ কক্ষে বসেই। মোবাইলে তাকে ফোন দেয়া হয়নি। অর্ভ্যথনা কক্ষ থেকে তাকে ফোন দেয়া হয় ইন্টারকমে। তিনি তার টেবিলের ইন্টারকমে কথা বলেছেন। তাহলে তিনি কি ভাবে বললেন, চেয়ারম্যানের সঙ্গে মিটিংয়ে আছেন? এখন প্রশ্ন হলো তা হলে তার ইন্টারকম সেট কি মুভিং? তিনি এই সেটটি নিয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে মিটিং করছিলেন , না ইড্রার চেয়ারম্যান মহোদয় তার এই মেম্বরের কক্ষে এসে মিটিং করছিলেন ? আসলে এ সবের কোনটিই সত্য নয়। আপেল মাহমুদ তার কক্ষেই ছিলেন। হয়তবা কোন কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন। তিনি সাংবাদিকের পরিচয় জানতে পেরে তাকে এড়িয়ে চলতে এই কৌশলটি নিয়েছিলেন। বিষয়টি তিনি অন্যভাবেও ম্যানেজ করতে পারতেন, বলতে পারতেন, আমি ব্যস্ত আছি, অথবা তাকে পরে অন্য কোন সময়ে আসতে বলেন। অথবা তাকে বসতে বলেন। কিন্তু কেন তিনি সাংবাদিককে এড়িয়ে চলতে চেয়েছেন, এর কারন অনুসন্ধানে জানা গেছে তাকে ঘিরে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইড্রায় সাম্প্রতিক বিতর্কীত কিছু কর্মকান্ডে সদস্য (লাইফ) আপেল মাহমুদের নাম উঠে আসছে। জুলাই বিপ্লবের পর ইড্রার প্রশাসন ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে বড় ধরনের রদবদল করা হয়। প্রথমে চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আসে। সাবেক চেয়ারম্যান জয়নুল বারী পদত্যাগ করেন। শূন্য এ পদে নিয়োগ পান ড. আসলাম আলম। তিনি নিয়োগ পাবার কিছু দিনের মধ্যে একদিনের নোটিশে চার সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। শূন্য পদে নতুন করে চারজন নিয়োগ দেয়া হয়। এদের মধ্যে আপেল মাহমুদ একজন। তার নিয়োগ নিয়ে সে সময়েই বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তিনি ছিলেন জুলাই বিপ্লবের চেতনা বিরোধি। তিনি ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট সরকারে সুবিধা ভোগি। ইড্রায় যোগ দানের আগে তিনি ফারইস্ট ইসলামী লাইফে সিইও ছিলেন। এরআগে তিনি প্রাইম লাইফে সিইও ছিলেন। পতিত সরকারের সময়ে এ দুটি কোম্পানিতেই লুটপাট হয়েছে। তিনি কি এর দায় এড়াতে পারেন। ফারইস্ট লাইফ অবৈধ ভাবে দখলে নিয়ে পরিচালনা বোর্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়। নতুন করে বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডে স্থান পাওয়াদের কেউ বীমা লাইফ ব্যবসায় অভিজ্ঞ ছিলেন না। এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হন শেখ হাসিনার চাচা এবং একটানা ১৭ বছর বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট পদ আকড়ে ধরে রাখা আরেক ফ্যাসিস্ট শেখ কবির। কোম্পানির উপযুক্ত সিইও হিসাবে তিনি বেছে নেন আপেল মাহমুদকে। অথচ আপেল মাহমুদের এতোবড় একটি বীমা কোম্পানি পরিচালনা করার পূর্ব অভিজ্ঞতা কখনোই ছিল না। ফলে তিনি এই কোম্পানির সিইও পদে দায়িত্ব পালন করে কোন সফলতার মুখ দেখাতে পারেন নাই। এরআগে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নিয়োগ পাওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় আলফা লাইফের সিইও পদে নিয়োগ অনুমোদন প্রস্তাব না-মঞ্জুর করে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইড্রা। এমন একজন বীমা কর্মকর্তাকে ইড্রার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়। তার এই নিয়োগ পাবার পেছনে সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যান ড. আসলাম আলমের আর্শীবাদ কাজ করেছে। একজন ভিন্ন তরিকার লোক হওয়া সত্ত্বেও ড. আসলাম আলম তাকে পছন্দ করেন। ইন্স্যুরেন্স একাডেমিতে তারা একটি প্রকল্পে এক সময়ে একসঙ্গে কাজ করেছেন। জুলাই বিপ্লবের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইড্রায় তার নিয়োগ পাওয়া নিয়ে অনেকে হতাশা ও ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করলেও মন্দের ভাল বলে তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক সময়ে তার কিছু কর্মকান্ড তার সম্পর্কে এ সেক্টরের বিষ্টিজনদের ধারনা বদলে দিয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর ইড্রায় গঠিত নতুন ম্যানেজমেন্ট খুব ভাল কিছু না করতে পারলেও এ সেক্টরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মিশন নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নেয়ায় প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে মনে হচ্ছে ইড্রা পূর্বের চেহারায় ফিরে যাচ্ছে। কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অথবা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আদালতে মামলা জট বাড়ছে। এ কারনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপোষনীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এর পছেনে বড় কাজ করছেন সদস্য (লাইফ) আপেল মাহমুদ। যে সকল কোম্পানী ইতোমধ্যে বীমা আইন লংঘন করছে এবং ইড্রা যে সকল কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেছে, সে সকল কোম্পানীর সাথেও আপেল মাহমুদ গোপনে সখ্যতা রক্ষা করে চলছেন। এ জন্য তিনি সব সময় সাংবাদিক এড়িয়ে চলতে চান। একটি বড় ব্যবসায়িক গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের বীমা কোম্পানির সিইও নিয়োগ অনুমোদনে নীতিমালা বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় তার বিতর্কীত অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি মিডিয়ায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। এই গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আইনে যাই থাকুক না, একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের কোন অনুষ্ঠানে যোগদান করায় তার নীতি নৈতিকতা নিয়ে বীমা খাতে প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে বীমা কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বীমা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছে। এ বিষয়ে কথা বলতে আপেল মাহমুদের হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরে ফোন দিলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নাই।
Posted ৫:২১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
Arthobiz | zaman zaman