শুক্রবার ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণে দেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে : মতবিনিময় সভায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

  |   বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   20 বার পঠিত

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণে দেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে : মতবিনিময় সভায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

অর্থবিজ প্রতিবেদক :
দৈনিক অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে দেশে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার (৫ গ্রাম) চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে প্রতিবছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে বুধবার (১৪ মে) ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজাতী’র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের লবণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. আহমাদ খাইনুল আবরার।
সভায় বলা হয়, উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণের একটি বড় উৎস হলো প্রক্রিয়াজাত খাবার। এ খাবারে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত লবণ নীরব ঘাতকের মতো দেশে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের মহামারি সৃষ্টি করছে। এই অব¯’া থেকে উত্তরণে অবিলম্বে একটি সমন্বিত জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল গ্রহণ করা এবং খাদ্যের মোড়কের সামনে ‘ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলিং’ বাধ্যতামূলক প্রয়োজন। খাদ্য মোড়কের সামনে সহজবোধ্যভাবে দেওয়া ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলের মাধ্যমে ভোক্তারা সহজেই লবণ, চিনি ও চর্বির মত স্বাস্থ্যহানীকর উপাদানের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে স্বা¯’্যকর পণ্য বেছে নিতে সক্ষম হবেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, লবণ শুধু স্বাদের উপাদান নয়, অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগসহ অসংক্রামক রোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি জাতীয় পাঠ্যক্রমে লবণের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান; যাতে শিশুদের মধ্যে শুরু থেকেই স্বা¯’্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মো. ইফতেখার বলেন, অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, কিš‘ বোধগম্য লেবেলিং না থাকার কারণে জনগন তা বুকে উঠতে পারে না। তিনি ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যব¯’া চালুর পাশাপাশি মোড়কে পুষ্টি উপাদানসমূহের সঠিক কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকার বন্ধ পরিকর। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কার্য পরিকল্পনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে চলছে। সম্প্রতি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি উদ্যোগে জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মোড়কিকরন আইন অনুযায়ী মোড়কে লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেথ বাধ্যতামূলক হলেও অনেক কোম্পানি তা করে না, অথবা এমনভাবে উল্লেখ করে যা ভোক্তারা পড়তে পারেন না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মোড়কিকরণ আইন সংশোধন করে সহজবোধ্য ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, অনস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের বিকল্প নেই। তিনি দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আন্তান জানান এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দেশের সুস্থ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারি বেসরকারি সকলের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিফায়ী বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে লবণ গ্রহণ হ্রাসের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো লবণ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে আসছে। জনস্বার্থে সরকারিভাবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে সর্বোচ্চ লবণের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। সেই জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো জরুরি।
উল্লেখ্য, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বা¯’্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ‘বিশ্ব সচেতনতা সপ্তাহ’ পালিত হয়। এবারের স্লোগান: ‘অতিরিক্ত লবণ বর্জন কবি, সুস্থ জীবন গড়ি’।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইদুল আরেফিন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিতি বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. ফারজানা আক্তার অভিন, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অসংক্রামক রোগ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. মো. মাবুল হক খান, জাতীয় পুষ্টিসেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম প্রোগ্রাম ম্যানেজার আজমেরী শারমিনসহ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং স্ট্রিট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৪১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

Arthobiz |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক : অহিদুজ্জামান মিঞা
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: খান ম্যানশন, ৮-ই, ২৮/এ-৫, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: arthobiz61@gmail.com
যোগাযোগ: 01670045191