
| রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট | 66 বার পঠিত
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশে প্রবর্তিত প্রথম বেসরকারি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৫ সালের ২৩ এপ্রিল দেশের প্রথম বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি হিসাবে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয়। কোম্পানিটির মূলমন্ত্র হল পরিকল্পিত ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে। লক্ষ্যসমূহ হল- মধ্য ও নি¤œ মধ্যম আয়ের মানুষ এবং নি¤œ আয় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা এবং দেশে স্বল্প শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, ও শিক্ষিত তরুন তরুনীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এই লক্ষ্য পূরণে কোম্পানি অনেকটাই সফল হয়েছে। বীমা গ্রাহকদের আস্থা অর্জন ও দ্রুত বীমা দাবি পরিশোধ করে এবং সর্বাধিক প্রিমিয়াম আয় করে দেশের শীর্ষ বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানির মর্যাদা লাভ করেছে কোম্পানিটি। এই সফলতা কোম্পানির সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারি যথাযথ দায়িত্ব পালন এবং বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোরশেদ আলম এমপির সঠিক দিক নির্দেশনা এবং পরিচালনা পর্ষদসহ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মো. কাজিম উদ্দিনের দুরদর্শিতা, সচেতনতা, সততা, কর্মতৎপরতা এবং কর্মনিষ্ঠার পরিচয়ই বহন করে।
দেশে ৮৩টি বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গ্রাহক সেবা ও স্বচ্ছতা জবাবদিহিতায় কোন বীমা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লাইফকে পিছু ফেলতে পারে নি। দেশের বীমা কোম্পাগিুলোর বার্ষিক প্রিমিয়াম আয়ের তালিকায় ধারাবাহিক ভাবে এ প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে শীর্ষে। ২০২৩ সালে ১৮৬৮ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় করে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে। ২০২২ সালে কোম্পানিটি প্রিমিয়াম আয় করেছিল ১৬৪২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি ১১৪০ কোটি টাকা এবং ২০২২ সালে ১০৯১ কোটি টাকা দাবি পরিশোধ করে। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পযর্ন্ত সর্বমোট বিক্রিত বীমা পলিসি’র সংখ্য ৬৭ লক্ষাধিক, সর্বমোট প্রিমিয়াম আয় ১৭ হাজার ১৮১ কোটি টাকা, লাইফ ফান্ড ৫,৩৫৭ কোটি টাকা, বিনিয়োগ ৫,৫৪৫ কোটি টাকা, মোট সম্পদের পরিমান ৬,০৬৪ কোটি টাকা, সর্বমোট বীমা দাবী পরিশোধ ১০,১২৪ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ বীমা দাবি পরিশোধ করায় কোম্পানিটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনর কাছ থেকে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পর পর দু’টি জাতীয় সম্মাননা এবং শীর্ষ করদাতার সম্মাননা ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে দেশি ও বিদেশি অসংখ্য অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে।
বীমা কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো.কাজিম উদ্দিনের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় শুধু ব্যবসায়িক সফলতাই অর্জিত হয়নি, দেশে বিদেশে কোম্পানির সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রফেশনাল পুরস্কার ‘সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস-সাফা গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছে ন্যাশনাল লাইফ। লাইফ বীমা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের একমাত্র জীবন বীমা কোম্পানী হিসেবে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এই অ্যাওর্য়াড লাভ করে। দেশের শীর্ষতম জীবন বিমা কোম্পানি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাজিম উদ্দিন বছরের সেরা সিইও’র স্বীকৃতি লাভ করেছেন। মালদ্বীপে সাউথ এশিয়ান পার্টনারশিপ সামিট কর্তৃপক্ষ সাউথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে জনাব মো. কাজিম উদ্দিনকে এ স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ উপলক্ষে ৩০ নভেম্বর জনাব মো. কাজিম উদ্দিনের হাতে ‘বেস্ট সিইও অব দ্য ইয়ার-২০২৩’ অ্যাওয়ার্ডটি তুলে দেয় সামিট কর্তৃপক্ষ। বেস্ট সিইও অব দ্য ইয়ারের পাশাপাশি বিমা ব্যবসায় অসামান্য অবদান রাখায় ন্যাশনাল লাইফকে ‘স্পেশিয়ালিস্ট ইনস্যুরেন্স কোম্পানি’র স্বীকৃতি দেয় সাউথ এশিয়ান পার্টনারশিপ সামিট। কাজিম উদ্দিনের দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন ও পরবর্তীতে সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সকল সূচকে কোম্পানিকে এগিয়ে নেওয়ায় তাকে এই বিশেষ সম্মানা দেয়া হয়। বেস্ট সিইও অব দ্য ইয়ার-২০২৩ স্বীকৃতি লাভ করায় কাজিম উদ্দিনকে ন্যাশনাল লাইফ পরিবারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন কোম্পানির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগন। ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লীর হোটেল রেডিসন ব্লু’তে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস-সাফা ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে এই পুরস্কার প্রদান করে। ন্যাশনাল লাইফের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ট্রান্সপারেন্সি, একাউন্টটিবালিটি ও কর্পোরেট গর্ভনেন্সসহ যথাযথ আর্থিক বিবরণী প্রকাশের জন্য সাফা উক্ত অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে একমাত্র জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স মর্যাদাশীল এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করায় কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদসহ সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে আনন্দ উৎসব বিরাজ করে।
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স দেশের প্রথম জীবন বীমা কোম্পানী ও বেসরকারী খাতে বীমা ব্যবসায় পথিকৃৎ। কোম্পানীটি বীমা খাতে বিশেষ অবদান রাখায় বীমা দিবসে জাতীয় পুরস্কার, এফবিসিসিআই বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, আইসিএসবি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড, আইসিএমএবি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড, আইসিএবি অ্যাওয়ার্ড, কমনওয়েলথ অ্যাওয়ার্ড ও ৪র্থ আইসিসি ইমার্জিং এশিয়া ইন্স্যুরেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ অর্জন, সাউথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৩, কমনওয়েলথ বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করে।
ন্যাশনাল লাইফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৭ লক্ষ মানুষকে বীমার আওতায় এনেছে, প্রিমিয়াম আয় করেছে ১৭,১৮১ কোটি টাকা এবং দাবি পরিশোধ করেছে ১০,১২৪ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানির লাইফ ফান্ড ৫,৩৫৭ কোটি টাকা, সম্পদ ৬,০৬৪ কোটি টাকা এবং বিনিয়োগ প্রায় ৫,৫৪৫ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানিতে বেতনভিত্তিক প্রায় ৫০০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দুই লক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে।
কোম্পানিটির বর্তমান মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব কাজিম উদ্দিন বীমা পেশায় দীর্ঘ অভিজ্ঞ দক্ষ সৎ উচ্চ শিক্ষিত কাজপাগল ও সহকর্মী বান্ধব এবং এ সেক্টরের বহুল আলোচিত বীমা ব্যাক্তিত্ব । তাঁর কর্মজীবনের প্রায় পুরো সময়টুকুই ন্যাশনাল লাইফে। ১৯৮৭ সালে এন্ট্রি লেভেল থেকে ন্যাশনাল লাইফে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ২০১৪ সালে ডিএমডি পদে পদোন্নতি লাভ করেন। কোম্পানির প্রশাসনের সর্বস্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেকে একজন অত্যন্ত দক্ষ কর্মী হিসাবে প্রমান করতে সক্ষম হন জনাব কাজিম উদ্দিন। তাঁর কর্মজীবনের সফলতায় যুক্ত হয়েছে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব পালন। বীমা কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা ও ব্যবসায়িক সফলতার স্বীকৃতি হিসাবে তাকে ধাপে ধাপে পদোন্নতি দিয়ে প্রথমে ডিএমডি, পরে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এরপর ভারপ্রাপ্ত এমডি এবং অবশেষে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। দীর্ঘ ৩৩ টি বছর তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন এই কোম্পানিতে। কোম্পানির প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন দক্ষ বীমা কর্মকর্তা হিসাবে। বাংলাদেশে বীমা সেক্টরে এক কোম্পানিতে এতো দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন এবং অবশেষে সেই একই কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ লাভের ঘটনা বিরল।
দেশে বীমা শিল্পের সার্বিক অবস্থা নানা সমস্যা এবং সম্ভবনা সম্পর্কে জানতে আমরা ’অর্থবিজ’র পক্ষ থেকে বেসরকারি খাতের শীর্ষ জীবন বীমা কোম্পানি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো. কাজিম উদ্দিনের মখোমুখি হই। তার সঙ্গে আলাপচারিতার বিশেষ অংশসমূহ সাক্ষাতকার আকারে পাঠকদের জন্য পত্রস্থ করা হলো।
অর্থবিজ : বাংলাদেশে বীমা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন সম্পর্কে বলবেন কি ?
মো.কাজিম উদ্দিন : বীমা ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। ভৌগলিক দিক থেকে দেশটি ছোট হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে দেশটি বড়। বিশাল জনগোষ্ঠি দেশের জন্য অভিশাপ নয়, আর্শীবাদ হতে পরে। দেশে বর্তমানে ৮৩ টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি জীবন বীমা কোম্পানি। আপাতদৃষ্টিতে দেশে জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান বেশি মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে বীমা কোম্পানি সংখায় বেশি নয়। দেশের খুব স্বল্প সংখ্যক লোক বীমার আওতায় এসেছে। দেশে মোট জনগোষ্ঠির মাত্র ৫ শতাংশ লোককে বীমার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। অথচ দেশের প্রায় প্রতিটি নাগরিকের জীবন বীমা করা উচিৎ। বীমা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশে জনসচেতনতার অভাব রয়েছে। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি ভাবে ব্যাপক প্রচারনা চালাতে হবে। বর্তমান সরকার বীমা সেক্টরের উন্নয়নে নানা মুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এই সেক্টরের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এবং উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি ভাবে জাতীয় বীমা দিবস পালন করা এই সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে বীমা সম্পর্কে জনমনে কিছুটা আস্থার সংকট রয়েছে। কিছু বীমা কোম্পানি সময় মতো দাবি পরিশোধ না করায় এর নেতিবাচক প্রভাব গোটা সেক্টরে পড়ছে। ভাল কাজের প্রচার কম হয়, অথচ খারাপ কিছু হলে সেটি দ্রুত প্রচার হয়। এ সব কারনে বীমা সেক্টরে যথেষ্ট সম্ভবনা থাকলেও আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে ন্যাশনাল লাইফ এর ব্যাতিক্রম। এই কোম্পানিটি গ্রাহক সেবায় কোন আপস করে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সকল ধরনের বীমা দাবি পরিশোধ করে গ্রাহকের আস্থা অজর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে।
অর্থবিজ : দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বীমা খাত কতটা অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে ?
মো.কাজিম উদ্দিন : দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বীমা খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বীমা গ্রাহক তার বীমা পলিসির প্রিমিয়াম জমা দিয়ে নিজের যেমন ভবিষ্যৎ আথির্ক নিরাপত্তা গড়ে তুলছেন, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে অবদান রাখছেন। বীমার টাকার একটি নিদিষ্ট পরিমান ব্যাংকে লাইফ ফান্ড হিসাবে সঞ্চিত থাকছে। গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ হচ্ছে। দেশের বীমা কোম্পানিগুলোতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশকে এগিয়ে নিতে বীমা সেক্টর বিশষ অবদান রাখছে।
অর্থবিজ : দেশে বিগত কয়েক বছর বার্ষিক প্রিমিয়াম আয়ে ন্যাশনাল লাইফ শীর্ষেঅবস্থান করছে, অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি পলিসি বিক্রয় করছে এই কোম্পানি, একজন গ্রাহক বীমা করার ক্ষেত্রে কেন এই কোম্পানিটি বেছে নিচ্ছে, কোম্পানির সিইও হিসাবে কারণটি ব্যাখ্যা করবেন কি ?
মো. কাজিম উদ্দিন: আপনার প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে একটি সেবা নেয়ার জন্য আপনি কখন আসবেন, সঠিক সময়ে যথাযথভাবে যখন আপনি আমার কাছ থেকে সেবাটি পাবেন, তখনই আপনি আমার কাছে আসবেন। পাশাপাশি আমাদের আরো কিছু কাজ রয়েছে। বীমা সুবিধাগুলো গ্রাহকদের দিতে হবে। একজন গ্রাহক বীমা ঝুঁকি নেয়ার পাশপাশি সঞ্চয় করে থাকে। গ্রাহকের সঞ্চয়ের বিপরীতে আমরা ভালো মুনাফা দিয়ে থাকি। একদিকে ঝুঁকির একটি সুবিধা অন্যদিকে সঞ্চয়ের মুনাফা। এ দু’টি সেবা যদি আমরা গ্রাহকদের দিতে পারি তাহলে গ্রাহকের আস্থা বাড়বে। একটি লাইফ বীমা কোম্পানির কাজ হচ্ছে গ্রাহকের ঝুঁকি গ্রহণ করা। সময়মতো যথাযথভাবে চুক্তিমূল্য পরিশোধ করা। যাকে আমরা সাধারণভাবে বলে থাকি বীমা দাবি। তাহলে আমার যদি যথাযথভাবে বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারি তাহলে আর গ্রাহকের সেবার বিষয় নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে না। অর্থাৎ গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে আমাদের প্রথম কাজ বীমা দাবি পরিশোধ করা। অনেকেই বীমা করতে চায়। পরিবারের জন্য কিছুটা হলেও ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা গড়ে তুলতে চায় তারা। প্রশ্ন হলো অনেক ক্ষেত্রে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, কোন বীমা কোম্পানিতে বীমা করবে। এখানে আস্থা অনাস্থার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পায়। অধিকাংশ লোকের ধারণা, বীমা করলে টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। এ ধারণা সত্য নয়। তবে কিছু কোম্পানি গ্রাহকের বীমা দাবী সময় মতো পরিশোধ করে না। গ্রাহককে মাসের পর মাস বছরের পর বছরও অপেক্ষা করতে হয়। এতে সেই কোম্পানিটি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে একটি খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়। কিন্তু ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এ ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। ন্যাশনাল লাইফের কোন বীমা গ্রাহককে তার বীমা দাবি পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না। কোন গ্রাহকের বীমা পলিসির মেয়াদ শেষ হতেই গ্রাহককে জানিয়ে দেয়া হয় এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহক তার বীমা দাবির চেক পেয়ে যান। এ ভাবে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করনের মাধ্যমে ন্যাশনাল লাইফ গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ন্যাশনাল লাইফের উন্নয়ন কর্মীদেরকে একটি পলিসি বিক্রয় করার জন্য দীঘদিন কোন লোকের পেছনে ঘুরতে হয় না, আগ্রহী জনগণ ন্যাশনাল লাইফের উন্নয়ন কর্মীকেই খুজেঁ বের করেন। ন্যাশনাল লাইফের সফলতা এখানেই, গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে পারা। কোম্পানির ম্যানেজমেন্টে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়ে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। ফলে দেশের বীমা সেক্টরে আস্থার জায়গায় ন্যাশনাল লাইফ জায়গা করে নিতে পেরেছে। গ্রাহক সেবা ও স্বচ্ছতা আমাদের অঙ্গিকার।
অর্থবিজ : বীমা করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে কি ধরনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে ?
মো. কাজিম উদ্দিন : বীমার প্রয়োজনীয়তা এবং সুবিধা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। বীমার প্রয়োজন ও সুবিধা সম্পর্কে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের খুব ভালো ধারণা নেই। এ ক্ষেত্রে সুবিধাগুলোর বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে। আগের তুলনায় আমাদের প্রচার অনেক বেড়েছে। এটা আশার দিক। ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করা হয়েছ্।ে প্রতি বছর এ দিনে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ভাবে সরকারি বেসরকারি ইলেকট্রোনিকস মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কোম্পানিগুলোর প্রডাক্ট সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এ ছাড়া জনগনকে উদ্বুদ্ধ করতে যুগোপযোগী ও আধুনিক বীমা পণ্য বা নতুন নতুন বীমা পরিকল্প করতে হবে, যাতে গ্রাহকরা আকৃষ্ট হয়। এর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর হতে হবে। বীমা কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থবিজ : বীমা খাতের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র ভূমিকা কিভাবে মূল্যায়ন করেন ?
মো. কাজিম উদ্দিন : বর্তমান সরকার বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য বীমা- আইন-২০১০ প্রণয়ন করে। এই আইনের আলোকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন করা হয়। সরকারের সদিচ্ছা অনুযায়ি বীমা সেক্টরের উন্নয়নে বর্তমান আইডিআরএ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ নীতিমালা এবং বীমা দাবি দ্রুত পরিশোধের মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থা অর্জনে অনেকগুলো প্রবিধানমালা প্রণয়ন করেছে আইডিআরএ। বীমা কোম্পানিগুলোতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করনে নানা ধরনের সংস্কার মূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে বীমা সেক্টরে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে একটি শৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৮৩ টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। খুব অল্প সংখ্যক কর্মী ও কর্মকর্তা নিয়ে সংস্থাটি কাজ করছে। এখনো সংস্থাটিতে যে জনবল রয়েছে তা ৮৩টি কোম্পানি দেখভালের জন্য যথেষ্ট নয়। আরও অনেক ভালো প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। আইনেরও কিছু সংশোধন প্রয়োজন। এরপরও নতুন একটি সংস্থা হিসেবে তারা যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে নতুন নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে এবং এ সব নীতিমালা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে হঠাৎ করেই বা রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তবে কাজ কিন্তু হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ করার কারণেই ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমছে। সবাই না করলেও কিছু কোম্পানি পারছে। বীমা দাবি পরিশোধে তারা যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। হাতে গোনা কিছু কোম্পানি বাদ দিলে বেশিরভাগ কোম্পানির দাবি পরিশোধের হার বেড়েছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করার জন্য আইডিআরএ নিয়মিত তদারকি করছে। ফলে যে যাই বলুক নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ কাজ কিন্তু করছে। সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে বলেই বীমা খাতে পরিবর্তন আসছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ’অর্থবিজ’ সম্পাদক অহিদুজ্জামান মিঞা।
Posted ৩:৩৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪
Arthobiz | zaman zaman