বৃহস্পতিবার ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বীমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগে কঠোর অবস্থানে ইড্রা

  |   মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   101 বার পঠিত

ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বীমা কোম্পানিগুলোর  বিনিয়োগে কঠোর অবস্থানে ইড্রা

অর্থবিজ প্রতিবেদক :
সরকারি সিকিউরিটিজ বিনিয়োগ নীতিমালা পুরোপুরি পরিপালনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ (ইড্রা)। সাধারণ বীমা ও জীবন বীমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ি বীমা কোম্পানিগুলোকে তাদের সম্পদের ন্যুনতম ৩০ শতাংশ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করার আইনি বাধ্যাবধকতা রয়েছে। বেশির ভাগ বীমা কোম্পানি ‘দীর্ঘদিন ধরে এ আইন লঙ্ঘন করে আসছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইড্রা) অতিসম্প্রতি এই নীতিমালা পরিপালনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইড্রা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইড্রার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবন বিমা কোম্পানিগুলো যদি সরকারি সিকিউরিটিজে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করে, তাহলে তা কোম্পানি ও গ্রাহক উভয়ের জন্য নিরাপদ। এতে আরও বলা হয়েছে, সরকার এই তহবিল উন্নয়ন কাজেও ব্যবহার করতে পারে, তাই এটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জীবন বীমা কোম্পানিগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের চেয়ে তাদের অর্থ জমি ও সম্পত্তি, শেয়ারবাজার এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে অধিক লাভজনক মনে করে। জানা গেছে বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯টি তাদের সম্পদের ৫ শতাংশেরও কম সরকারি খাতে বিনিয়োগ করেছে, ৪টি ১৫ শতাংশের কম এবং ৪টি ২৫ শতাংশের কম অর্থ বিনিয়োগ করেছে। তবে কিছু বীমা কোম্পানি ৩০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করেছে। কম বিনিয়োগ করা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ না করার পেছনে বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছে।
৩০ শতাংশের কম বিনিয়োগ করা জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর নামের তালিকায় পপুলার লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, প্রাইম ইসলামি লাইফ, প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ, সোনালী লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, সানলাইফ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, আকিজ তাকাফুল লাইফ, আলফা ইসলামী লাইফ, বায়রা লাইফ, বেস্ট লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, ও গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নাম রয়েছে। কোম্পানিগুলোর ২০২৩ সালের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
মেঘনা লাইফের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারি সিকিউরিটিজে তার কোম্পানির বিনিয়োগ ৩০ ভাগের বেশি । তিনি বলেন, ফিক্সড ডিপোজিট ও সরকারি সিকিউরিটিজ বীমা দাবী নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, এ জন্য বিনিয়োগের অনুপাত আগে কিছুটা কম ছিল। তবে আমরা বিনিয়োগের টার্গেট এখন পুরোটাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ট্রেজারি বিল ও বন্ড লাভজনক। এ ছাড়া আমরা সবসময় সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করি।
প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম বলেন, তার বীমা কোম্পানির সম্পদের প্রায় ৫০ শতাংশ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করা আছে। তিনি বলেন, সরকারি নীতি মালা হচ্ছে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করা। আমাদের এর চেয়ে অনেক বেশি বিনিয়োগ করা আছে।
আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আলম সিদ্দিকী অভি বলেন, আমরা চলতি জুন মাসের মধ্যে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে সরকারি নীতিমালার টার্গেট পূরন করতে সক্ষম হয়েছি। ইতোমধ্যে কোম্পানির সম্পদের ৩০ শতাংশ ট্রেজারিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আরও বিনিয়োগ করার পরিকলপনা রয়েছে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে আমাদের কিছুটা ঘাটতি ছিল। এ বছরে সেটি পূরন করা সম্ভব হয়েছে।
আকিজ তাকাফুলের ভারপ্রাপ্ত সিইও মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, কোম্পানিটি ২০২১ সালে গঠিত হয়েছে এবং এখনো বিনিয়েগের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছাতে পারেনি। ‘আমাদের লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ১১ কোটি টাকা এবং তা ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখা হয়েছে।
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বার্হী কর্মকর্তা হাসান তারেক অর্থবিজকে বলেন, আমরা এ বছর একটু নানান ঝামেলার মধ্যে আছি। সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে আমাদের বিনিয়োগ করা আছে, তবে এ মুহূর্তে আপনাকে প্রকৃত ফিগারটি বলতে পারছি না। আপনি অফিসে আসলে ফাইল দেখে প্রকৃত তথ্য দিতে পারব অথবা আপনি আমাদের কোম্পানি সেক্রেটারির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে কোম্পানি সেক্রেটারিকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে কার্যরত একমাত্র আন্তর্জাতিক বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন, ‘নিরাপদ ও কম অস্থির খাতে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে পলিসিহোল্ডারদের অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার। ‘এটি গ্রাহকদের আমাদের আর্থিক সামর্থ্য নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকতে এবং প্রত্যাশিত মুনাফা পেতে সহায়তা করে।
ইড্রার মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম অর্থবিজকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করছি। বেশ কয়েকটি কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে। তাদের রিপোর্ট পেলে সামগ্রিক চিত্রটি পাওয়া যাবে। তবে ইতোমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যেসব কোম্পানি সরকারি সিকিউরিটিজে খুব কম বিনিয়োগ করেছে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করার জন্য বীমা কোম্পানিগুলোকে এক মাস থেকে দুই মাস সময় দেওয়া হচ্ছে। ‘বীমা কোম্পানিগুলো নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করছে কি না তা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগের তথ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি তারা নিয়ম মেনে চলতে না পারে, তাহলে ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের জরিমানাও করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. মাঈন উদ্দিন বলেছেন, কোম্পানিগুলো এই আইন লঙ্ঘন করে আসছে। ‘নিয়ম লঙ্ঘনকারী কোম্পানিগুলোকে শাস্তি দিতে না পারায় পলিসিহোল্ডাররা পলিসির মেয়াাদপূর্তির কয়েক বছর পরও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, জমিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইডিআর’র কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৫০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪

Arthobiz |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক : অহিদুজ্জামান মিঞা
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: খান ম্যানশন, ৮-ই, ২৮/এ-৫, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: arthobiz61@gmail.com
যোগাযোগ: 01670045191