
| সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 38 বার পঠিত
অর্থবিজ প্রতিবেদক :
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিগত সরকার বিদেশি ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে অনেক স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়েছে। এধরনের ঋণ দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।
অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বর্তমান ‘ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক দৃশ্যকল্প ু এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আজ সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বেসরকারি খাতকে বিদেশী মুদ্রায় ঋণ নিতে উৎসাহিত করেছে। তিনি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিদেশী মুদ্রায় বেসরকারি খাতে ঋণ ছিল ৩৫ কোটি ডলার। অথচ ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৩০০ কোটি ডলার। এসব ঋণ স্বল্পমেয়াদী ও সুদের হার উচ্চ। যখন ঋণ নিয়েছে তখন ডলারের সাথে টাকার বিনিময় হার ছিল ৮০ থেকে ৮৪ টাকা। বর্তমানে ডলার প্রতি ১২২ টাকা। অদূর ভবিষ্যতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়তো আরো বাড়বে।
পুঁজিবাজার সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি ঠিক করতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আগে ঠিক করতে হবে। বিএসইসি এই দরবেশের মতো লোকদের সুবিধা দিতে অনেক নতুন নতুন রীতিনীতি, বিধান-প্রবিধান বানিয়েছে। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আগে শক্তিশালী করা উচিত। তিনি বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক যদি অন্যায় করে থাকে তবে তার শাস্তি হওয়া উচিত। দোষ মালিক করে, প্রতিষ্ঠান দোষ করে না। তাই মালিককে শাস্তি দেয়া হোক প্রতিষ্ঠানকে নয়।
আব্দুল আউয়াল বলেন, বেক্সিমকোর যে প্রতিষ্ঠানগুলো শুনতে পাচ্ছি বিক্রি করবে, কারা বিক্রি করবে কেন বিক্রি করবে? আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে মনে করি কোন উৎপাদনশীল খাতে সরকার এমন কোন কাজ স্টেপ নিবেন না যাতে দেশের উৎপাদন শিল্প ব্যহত হবে, যার ফলে শ্রমিকরা চাকরি হারাবেন। বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক কর্মকর্তারা যদি দোষ করে থাকে তবে আমি চাই তাদের শাস্তি দেয়া হোক। কিন্তু সরকারের এমন কিছু করা উচিত না, যার ফলে উৎপাদনমুখী শিল্প ব্যহত হবে।
আব্দুল আউয়াল বলেন, যে কোন দেশের অর্থনীতির বর্তমান হাল-চাল বিচার করতে গেলে, প্রথমেই যে সব বিষয় সামনে চলে আসে তা হলো সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন নির্দেশক, বাজার ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক নীতিমালাসমূহ। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো “সার্বিক চাহিদা” বা অর্থনৈতিক পরিভাষায় ‘জিডিপি’ অথবা ‘সার্বিক অভ্যন্তরীন উৎপাদন’ বৃদ্ধি করা। অতপর এ লক্ষ্য অর্জনে যথাযথ নীতি প্রণয়ন, প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো।
অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন যাই হোক, সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা থাকা অতীব প্রয়োজন। তবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সমস্যা হলো; বিভিন্ন নির্দেশকের সম্পর্ক পরম্পরার মধ্যে যে জটিলতা, প্রথমে সেগুলোকে ধর্তব্যে আনা। নির্দেশকগুলোর বর্তমান হাল-চাল বিবেচনা করে ভবিষ্যতে সেগুলোতে ইতিবাচক ফলাফল অর্জনের পরিকল্পনা করা।
তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনায় বোঝা যায় যে একনায়কতন্ত্র, স্বেচ্ছাচারী শাসন, দলীয়করণ, দলীয় লোকদের তোষণ- পোষণকে বিগত সরকার রাষ্ট্রীয় রীতি-নীতিতে পরিণত করে ফেলেছিল। অন্যদিকে আবার বিগত সরকার জনগণের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে নিজেদের কব্জায় নিয়ে ধ্বংস বা দুর্বল করে দিয়েছিল। ফলে বাজার ব্যবস্থাপনা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল। ফলে জনগণের কল্যাণে যথোপযুক্ত নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরিবর্তে আত্ম- স্বার্থ সন্ধানী রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক অর্থাৎ বিশেষ স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর লুটপাটে সহায়তা করার লক্ষ্যে আইন-কানুন-নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত ছিল।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে আব্দুল আউয়াল বলেন, বাজেটে ঘাটতি (সরকারের আয় থেকে ব্যয় বেশি) হলে সরকারকে বাধ্য হয়ে ধার নিতে হয়। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য যৌক্তিক পর্যায়ের বাজেট ঘাটতি বা সম্প্রসারণমূলক রাজস্বনীতি অনভিপ্রেত কিছু নয়। সরকার যদি পরিকল্পিতভাবে একটা সীমার মধ্যে থেকে ঋণ গ্রহণ করে সেটা অর্থনীতির জন্য সর্বদা ক্ষতিকর নয়। তবে অপরিকল্পিত ও অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত মাত্রায় ঋণ নেওয়া অর্থনীতির জন্য সবসময় সমস্যা সৃষ্টি করে। ঋণ করে অতিরিক্ত ব্যয় করার (সম্প্রসারণমূলক রাজস্বনীতি) বিষয়টির উদ্দেশ্য প্রায় সব দেশে সব সময় একই। সব সময় বলা হয় ঋণ নেয়ার উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেয়ার পেছনে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য যতটুকুই হোক, তার চেয়ে বেশি থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
বিনিয়োগ ও আমদানিকৃত মূলধন প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই নেতা বলেন, মোট অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ সবসময়েই মোট অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও আমদানিকৃত মূলধন, এ দুয়ের যোগফলের সমান। অবশ্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ব্যবধান দূর করতে বিদেশি মূলধন স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে কোনো দেশ অভিমুখে প্রবাহিত হয় না। বিদেশি মূলধনের অন্তঃপ্রবাহ নির্ভর করে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনা, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, রাজনীতি, প্রতিযোগিতামূলক সুযোগ-সুবিধা ও অন্য কোনো দেশে বিনিয়োগ করলে কী হারে মুনাফা পাওয়া যাবে, তার পার্থক্যের ওপর। যে দেশে মুনাফা বেশি হবে বাজারের সাধারণ নিয়মেই মূলধনের প্রবাহ সে দেশ অভিমুখে বেশি প্রবাহিত হবে।
তিনি বলেন, সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সাথে দেশে উৎপাদনের অবকাঠামো ও প্রযুক্তির কাঠামোগত উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ক্রমান্বয়ে মূলধন বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। সঞ্চয়ের হার এবং বিনিয়োগের প্রসার, বিস্তৃতি ও উৎকর্ষের সাথে জাতীয় সম্পদের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ও জাতীয় আয়ের বিলিবন্টনের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া জড়িত।
এফসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে নিচুমানের দুর্বল শাসন ব্যবস্থা এক বড়রকমের জরুরি মাথাব্যথা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিচুমানের শাসন দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র হ্রাসের পথে এখন এক পর্বত সমান বাধা। শাসনে দুরবস্থা জাতীয় অর্থনীতি, আর্থিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে কুরে কুরে খাচ্ছে। বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অবনতির অতল গহ্বরে। সেই সাথে দেশের শ্রমজীবি মানুষগুলিকে তাদের সম্ভাবনা ও সুযোগ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাদের প্রাপ্য সামাজিক ন্যায়বিচার, সম্প্রীতি, নিরাপত্তার পরিবেশ ও নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সুফল কেড়ে নিচ্ছে।
Posted ৭:৪৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Arthobiz | zaman zaman