
| শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 27 বার পঠিত
অর্থবিজ প্রতিবেদক :
জাতীয় বাজেটে জেন্ডার বাজেট অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়ক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১২ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম; স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সুপারিশ উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী আন্দোলনের বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতিবিদদের নারী আন্দোলনের প্রতি আকাঙ্ক্ষা আছে, নারীর অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদের গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে করণীয় নির্ধারণে মতামত দেয়ার মাধ্যমে ভূমিকা পালন করতে হবে, নারীর কক্কাস তৈরিতে মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হতে হবে, নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ, ধর্মনিরপেক্ষ, মানবিক ও শিক্ষিত দেশ গড়তে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাসে জেন্ডার বাজেট অন্যতম একটি টুল। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে আমাদের অনেক অর্জন থাকলেও বর্তমানে এসব ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ছি। এমতাবস্থায় নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি বাজেটে জেন্ডার বাজেট আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে হবে, জেন্ডার বাজেটের ফলে নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাস কতটা হয়েছে ও জেন্ডার বাজেটের ফলাফল মূল্যায়নে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, একাডেমিশিয়ান এবং অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সুপারিশ উপস্থাপনায় ৯টি জেলা শাখা (টঙ্গী, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও যশোর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশে আলোকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, জলবায়ু মোকাবেলা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, মূল্যস্ফীতি কমানো, মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, নারীর পারিবারিক কর্মসূত্রে প্রাপ্ত সুপারিশ উপস্থাপনে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি, নারীর জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ইত্যাদি বিষয়গুলোর ওপর জনা গোস্বামী গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, জেন্ডার বাজেটের মেথডলজি নিয়ে যে সমস্যাগুলো আছে তা পরিবর্তনে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে; বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে সে বিষয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ওপর জোর দিতে হবে, নারীদের গার্মেন্টসে কাজের হার বিগত সময়ে বেশি থাকলেও বর্তমানে কমে ৬০ শতাংশে এসেছে, এমতাবস্থায় নারীর অল্টারনেটিভ আনুষ্ঠানিক কাজের সুযোগ কী তা খুঁজে দেখতে হবে, গার্মেন্টসের নারী কর্মীদের জন্য এমপ্লয়মেন্ট ইনস্যুরেন্স স্কিম চালুকরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, মাদ্রাসার নারী শিক্ষায় বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে, উচ্চ শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমাতে ন্যাপকিন তৈরির কাচামালের ওপর কর প্রত্যাহার, অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে নারী কক্কাস চালুর জন্য আহ্বান জানান। নারীর প্রতি বিদ্বেষ দূর করতে ধর্ম ও নারীকে মুখোমুখি দাঁড় করানো থেকে সমাজকে মুক্ত করতে সাংগঠনিক কর্মসূচি গ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, নাগরিকদের পক্ষ থেকে জেন্ডার বাজেট প্রকাশ অব্যাহত রাখতে হবে। অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার আইবাস ব্যবহারের মাধ্যমে জেন্ডার বাজেট মনিটরিং করা সম্ভব, এ বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করানোর জন্য নারী আন্দোলনকে অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জেন্ডার বাজেটে নারীর বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বিশেষায়িত বাজেট তৈরি, শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, বাল্যবিয়ে কমানোর জন্য মেয়েদের উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি, বরাদ্দকৃত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, সম্পাদকমণ্ডলী ও সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।
Posted ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
Arthobiz | zaman zaman