
| শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 34 বার পঠিত
অর্থবিজ প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়ার পর ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানসহ সাত কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। আদালতের অনুমতি নিয়ে ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞার আদেশ ইমিগ্রেশনসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে আলোচিত মামলাটির তদন্ত ধীরগতিতে চলছিল। এমন প্রক্ষাপটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লা আল ইয়াছিনকে এ মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার তদন্তে মোট ১৪ জনের সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে। তাদের মধ্যে সাতজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
তাদের মধ্য থেকে ছয়জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, মেইন্টেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী পরিচালক দিপঙ্কর কুমার চৌধুরী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর আনিস এ খান ওরফে আনিসউদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক এসএম রেজাউল করিম, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের (এবিডি) ডিলিং রুমের সহকারী পরিচালক শেখ রিয়াজ উদ্দিন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক (যিনি রিজার্ভ হ্যাকের আলামত নষ্টের দায়ে অভিযুক্ত), সাবেক একজন ডেপুটি গভর্নরসহ আরও সাত কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দারা। সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, রিজার্ভ সরানোর ঘটনা জেনেও পুরোপুরি গোপন রেখেছিলেন তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। অভিযোগ রয়েছে- তিনিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের বাঁচাতে মামলা করার সময় চুরির ধারা ৩৭৯ বসানো হয়। উদ্দেশ্য, মামলাটি যেন অন্য কোনো সংস্থায় না পাঠিয়ে সিআইডিকে দিয়েই তদন্ত শেষ করা যায়। তখন সরকারের দায়িত্বশীলরা চেয়েছিলেন একটি ফরমায়েশি প্রতিবেদনের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে।
সিআইডিকে রিজার্ভ চুরির মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার পর তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি) রায়হান উদ্দিন খানকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তদন্তে নেমে ওই কর্মকর্তা জানতে পারেন— এই অপকর্মে বিদেশি নাগরিকদের সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা। এ মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে ফিলিপাইন, চীনসহ কয়েকটি দেশেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম উঠে আসায় তদন্ত নতুন মোড় নেয়।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের রক্ষিত ডলার সরিয়ে নেওয়ার অপরাধের পেছনে একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তার সিস্টেমে ২০০৯ সালে যে কাজ করা হয়েছে, সেখানে ফিলিপাইনের সাইবার টিম ছিল। মূলত তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা সিস্টেমের গোপনীয়তা সম্পর্কে ফিলিপাইনের টিমগুলো জেনে যায়। ২০১৫ সালের দিকে পরিপূর্ণ পরিকল্পনা করে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা বাস্তবায়ন করা হয়।
রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি শুরুতে গোপন রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ঘটনার ৪১ দিন পর কর্তৃপক্ষ তাদের সুইফট সিস্টেম হ্যাক করে রিভার্স চুরি করা হয়েছে বলে একটি মামলা করে। ৫৪ ধারায় করা মামলাটিতে চুরির ৩৭৯ ধারাও জুড়ে দেওয়া হয়। এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।
আলোচিত এ ঘটনার পর গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে নানা সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও মূল ঘটনা ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আড়ালেই থেকে যায়।
Posted ৫:৩২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Arthobiz | zaman zaman