বৃহস্পতিবার ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আকিজ লাইফের সিইও নিয়োগ অনুমোদন প্রসঙ্গ

হাইকোর্টে রীট মামলায় আলমগীর চৌধুরীর তথ্য গোপন

  |   শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   180 বার পঠিত

হাইকোর্টে রীট মামলায় আলমগীর চৌধুরীর তথ্য গোপন

অহিদুজ্জামান মিঞা :
আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সি.সি) মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদন না-মঞ্জুর করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের (ইড্রা) দেয়া আদেশের কার্যকারিতায় ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি এ.কে.এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ ২৬ জানুয়ারি একদিনে রীটের (নং- ১১৪৩/২০২৫) শুনানি শেষে এই আদেশ জারি করেন। আদালত একই সঙ্গে তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইড্রাকে। এক মাসের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে.এম.রাশেদুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আলমগীর চৌধুরীর করা প্রথম রীটের (রীট নং-৫২৯/২০২৫) ১৩, ১৪ ও ১৯ জানুয়ারি শুনানি শেষে ২৭ জানুয়ারি এটি খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ২৬ জানুয়ারি রীটটির রায়ের জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিল। কিন্তু রীটকারির আইনজীবী তথ্য গোপন করে ২৬ জানুয়ারি বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চে আবেদনকারির পক্ষে একই বিষয়ে অপর একটি রীট (রীট নং-১১৪৩/২০২৫) করেন। একদিনেই এই রীটের শুনানি শেষে আদালত ইড্রার আদেশে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ জারি করেন।
অদালতে প্রথম রীটটি বিচারাধীন থাকাকালে অপর একটি বেঞ্চে দ্বিতীয় রীটটি করে আদালতের এই নির্দেশনা নেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইড্রার একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সাথে ভাবছেন। আদালতে তথ্য গোপন করে এই নির্দেশনা নেয়া হতে পারে। সূত্রটি আরও বলেছেন, তারা সরকারের পক্ষে আদালতে যাবেন।
এদিকে হাইকোর্টের ওয়েভ সাইটে দেয়া তথ্যে জানা গেছে, রীটকারি মোহাম্মমেদ আলমগীর চৌধুরী আকিজ তাকাফুল ইসলামী লাইফে সিইও পদে তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রীট ( রীট নং ৫২৯/২০২৫) করেন। বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার বেঞ্চে ১৩, ১৪, ১৯ জানুয়ারি-২০২৫ তারিখে রীটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েভ সাইটে উল্লেখিত তথ্যে দেখা যায়, ২৬ জানুয়ারি প্রথম রীটের ( রীট নং ৫২৯/২০২৫) শুনানির জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি বাদিপক্ষ এই রীটের শুনানিতে অংশ গ্রহন না করে বিচারপতি এ.কে.এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চে দ্বিতীয় রীটের (নং- ১১৪৩/২০২৫) শুনানিতে অংশ নেন। আদালত শুনানি শেষে ইড্রার আদেশে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ জারি করেন। এ পর বাদী পক্ষ প্রথম রীটটি ( রীট নং ৫২৯/২০২৫) ২৭ জানুয়ারি আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেন। এই নিদের্শনা অনুযায়ি আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সি.সি) মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদন না-মঞ্জুর করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের (ইড্রা) দেয়া আদেশটি বহাল রয়েছে। কিন্তু বাদ সেজেছে হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চের ২৬ জানুয়ারি দেয়া রায়।
২৬ জানুয়ারি প্রথম রীটের (ন ং-৫২৯-২০২৫) তথ্য গোপন করে বাদি পক্ষের আইনজীবী নতুন একটি রীট (নং ১১৪৩-২০২৫) করেন। এ দিনেই এই রীটের শুনানি শেষে আদালতের নির্দেশা আসে। ২৬ জানুয়ারি শুনানির জন্য অপেক্ষমান থাকা প্রথম রীটটি (৫২৯-২০২৫নং ) পরের দিন ২৭ জানুয়ারি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
জানা গেছে, আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রীট (রীট নং-১৬২১১/২০২৪) আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি শশাঙ্খ শেখর সরকার ও রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ ডিসেম্বর রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদন আদালতের আদেশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষকে (ইড্রা)। বীমা কর্তৃপক্ষ আদলতের নির্দেশীত সময়ের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে নিয়োগ প্রস্তাব আবেদন না মঞ্জুর করার একটি আদেশ জারি করে ৯ জানুয়ারি আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়।
এ সংক্রান্ত পত্রে বীমা কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন কর্মকর্তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবহিত করতে বলা হয়।
মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই আদেশের বিরুদ্ধে গত ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্টে প্রথমে একটি রীট করেন। এই রীটের শুনানি চলাকালে ২৬ জানুয়ারি অপর একটি বেঞ্চে আরও একটি রীট করেন। এই দ্বিতীয় রীটটির শুনানি শেষে ইড্রার আদেশে স্থগিতাদেশ জারি করে আদালত।
মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী ২০২১ সালের ২৭ জুন আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) পদে যোগদান করেন । কোম্পানিটির চেয়ারম্যান শেখ শামীম উদ্দীন ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মুখ্য নির্বাহী পদে আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন চেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করেন। আবেদন করার দুই বছর সাড়ে তিন মাস পর বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (ইড্রা) আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেছে।
ইড্রার চিঠিতে বলা হয়েছে, আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ অনুমোদন আবেদনের সাথে তার দাখিলকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, কর্তৃপক্ষ দ্বারা তার পূর্বের দুটি কর্মক্ষেত্র হতে তদন্তপূর্বক প্রাপ্ত প্রতিবেদনসমূহের আলোকে জালিয়াতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ সংগৃহীত করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় সিইও পদে তার নিয়োগ প্রস্তাব না-মঞ্জুর করা হলো।
পত্রে আরো বলা হয়, বীমা আইন, ২০১০ এর ৮০ (৪) ধারা মোতাবেক কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ একাধারে ৩ মাসের অধিক সময়ের জন্য শূন্য রাখা যাবে না বিধায় ৩ মাস পূর্তির ১৫ দিন পূর্বে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা অনুযায়ী যোগ্য মুখ্য নির্বাহীর নিয়োগ প্রস্তাব এবং মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্নপদের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন কর্মকর্তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে (প্রমাণকসহ) কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ এর আলোকে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগের অনুমোদন প্রস্তাবের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ১৭৭তম সভায় আলোচনাক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়, আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি’র ১৬ তম পর্ষদ সভায় মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীকে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তিন বছরের জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে নিয়োগ অনুমোদনের জন্য ইড্রার চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করা হয় কোম্পানিটির চেয়ারম্যান শেখ শামীম উদ্দীনের পক্ষ থেকে। আবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়োগ চুক্তির কিছু শর্ত সংশোধনের জন্য চিঠি পাঠায় ইড্রা। সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করে আকিজ তাকাফুল। এর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষা সনদের আইনগত প্রামাণকসহ আবেদন করতে চিঠি দেয় ইড্রা।
প্রমাণক দাখিলের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মুখ্য নির্বাহী পদে আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ অনুমোদনের আবেদন নিষ্পত্তি না করে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে ইড্রা। আবেদনের পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদেক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাননি আলমগীর চৌধুরী বলে রীটে উল্লেখ করা হয়।
ইড্রার এই চিঠি দেয়ার মধ্য দিয়ে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদনের বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। এরআগে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষা সনদের বৈধতা নিয়ে একাধিক মিডিয়ায় খবরও প্রকাশ হয়। খবরটি আমলে নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার শিক্ষা সনদের বৈধতা যাচাই করে অবশেষে এই সিদ্ধান্ত দেয়।
আলমগীর চৌধুরীর হোয়াটস্অ্যাপ নম্বরে ফোন দিয়ে একটি রীটের শুনানি শেষ না হওয়া সত্ত্বেও একই বিষয়ে অপর একটি বেঞ্চে আর একটি রীট করার কারন এবং এই রীটের নির্দেশনার একদিন পর প্রথম রীটটি প্রত্যাহার করে নেয়া সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি অর্থবিজকে বলেন, এটি আইনগত বিষয়, একটি রীট বিচারাধীন থাকাকালে আর একটি রীট কেন করা হয়েছে, এ বিষয়টি আমার আইনজীবী বলতে পারবেন, আমি কিছু বলতে পারছি না। তিনি বলেন, ইড্রা আমার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আবেদন অনেক দিন আটকিয়ে রেখেছে। আমার কাছে বিভিন্ন সময় বিভন্ন ধরনের কাগজ চেয়েছে, আমি সবধরনের কাগজ তাদেরকে দিয়েছি। তারপরও আমার নিয়োগ অনুমোদন করে নাই। অবশেষে আমি আদালতে গিয়েছি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:৪৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Arthobiz |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক : অহিদুজ্জামান মিঞা
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: খান ম্যানশন, ৮-ই, ২৮/এ-৫, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: arthobiz61@gmail.com
যোগাযোগ: 01670045191