
| বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ | প্রিন্ট | 517 বার পঠিত
অর্থবিজ প্রতিবেদক :
প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরের টেন্ডার জালিয়াতি এবং মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের দুই কর্মচারী যথাক্রমে মো. রবিউল করিম (৪৫) পিতা: আব্দুস সোবহান, স্থায়ী ঠিকানা: মহানন্দগাছা, থানা বড়াই গ্রাম, জেলা: নাটোর ও শান্তনু কুমার দাশ (৪৬), চিন্তা হরণ দাস, বাসা/হোল্ডিং ১৭, রোড ৩২, পল্লবী (উত্তর) ঢাকা, এখন কারাগারে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ্ দিবা ছন্দার আদালত ২৯ এপ্রিল উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে আসামীদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আসামিদের ২৯ এপ্রিল কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে গত ২৪ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিলাল আল আজাদের করা আবেদনের ওপর এ দিনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালতে আসামিদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ্ দিবা ছন্দার আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
রাজধানীর গুলশান থানায় আসামীদের বিরুদ্ধে গত ২৩ এপ্রিল ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০/৪০৮/৪২৭ ধারায় করা মামলায় (মামলা নং-২৫, তাং ২৩/০৪/২০২৪) অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আসামীরা পরস্পর যোগসাজস করে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তথ্য গোপন করে মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি. এর প্রায় বিশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এবং ব্যবসায়িক প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন করে। আসামিরা দি ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল এর নামে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড থেকে সম্পূর্ণ খরচ দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করে এ সব টাকা আত্মসাৎ করে।
মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের চাকরির বিধি অনুযায়ী চাকরি করাকালীন কোন কর্মচারী সমজাতীয় পণ্যের ব্যবসা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানটি জাপানি কোম্পানি ফুজিফিলম এবং সীমাজজু কর্পোরেশনের একক পরিবেশক হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আসছে। ১ নং আসামি তথা মো. রবিউল করিমকে কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা ক্রয়, মহাদপ্তরে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। গত ১ এপ্রিল প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর থেকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশের মাধ্যমে কোম্পানি জানতে পারে যে, ১ নং আসামি কোম্পানিতে কর্মরত থাকাবস্থায় সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধভাবে এবং সরকারি সংস্থার নিকট তথ্য গোপন করে প্রতারণা ও সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্য অপর একটি প্রতিষ্ঠান দ্যা ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে এবং সেই প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং ব্যবস্থাপনার অংশীদার হিসেবে স্বাক্ষর করেন। এ সব দরপত্রে ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামে কাজ পেতে মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের নামে বেশি দর দেখানো হতো এবং ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির নামে সর্বনি¤œ দর দেখানো হলেও এ ক্ষেত্রে কৌশলে অতিরিক্ত দরে কাজ নিয়ে সরকারের বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতি করে। দ্যা ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তিনি প্রযুক্তি ইন্টারন্যাশনাল নামীয় অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন। কারণ দর্শানোর নোটিশ থেকে কোম্পানি জানতে পারে যে ২নং আসামি তথা শান্তনু কুমার দাশ আসামি রবিউলের ব্যবসায়ী অংশীদার হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে এমন বেআইনি কাজ করছে। আসামি রবিউল কোম্পানির লেটার হেড জাল করে জাল স্বাক্ষর করে প্রতারণামূলকভাবে গত ১৩ এপ্রিল প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর পত্র ইস্যু করে এবং উল্লেখ করেন তিনি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে আছেন।
তথ্য গোপন করে ১ নং আসামি মো. রবিউল করিম তার ব্যক্তিগত এবং দ্যা ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামীয় কোম্পানি মেডি গ্রাফিক কোম্পানির বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন এবং আসামিরা বিভিন্ন নামে বেনামে অনেক সম্পত্তি অর্জন করেন। যদিও তারা সামান্য বেতনে কোম্পানিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। অবৈধ অর্জনের মাধ্যমে আসামি রবিউল ঢাকার মধ্যে বিলাসবহুল ৪ টি ফ্ল্যাট, রংপুরে বাগান বাড়ি, নাটোর ৫০ বিঘা জমির মালিক। আসামিদের কাছে মালামাল বিক্রয়ের হিসাব চাইলে তারা হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়। আসামি শান্তনু বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ ও বেআইনিভাবে কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ২টি প্লট, গাড়ি ও ব্যাংকে মোটা অঙ্কের টাকা নামে-বেনামে জমা রাখে।
এ ঘটনায় মেডি গ্রাফিকের এডমিন অফিসার শেখ জাকির হোসেন বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার উদ্দেশ্য জালজালিয়াতি, নকল দলিল ব্যবহার, কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়।
মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসামীরা চতুর ও দুর্নীতিপরায়ন গোছরের লোক। তারা জামিনে বের হয়ে মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের নামে পুনরায় প্রতারনা করতে পারে, এ জন্য তাদের সাথে উক্ত কোম্পানির কোন ব্যবসায়িক লেনদেন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
Posted ৩:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
Arthobiz | zaman zaman